বাবা-মা চায় মেয়ে তাদের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করুক। মেয়ে চায় নামাজী-পরহেজগার পাত্র ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। বহু রেষারেষি, মনকষাকষি আর উত্তপ্ত বাদানুবাদের পরে অবশেষে মায়ের চোখের জলের কাছে মেয়েকে হার মানতে হলো। বুক ভরা অভিমান নিয়ে বাবার পরিচিত এক ছেলের সাথে দেখাদেখি করতে সায় দিল সে।
ছেলে দারুণ হ্যান্ডসাম, ছয় ফুট দেড় ইঞ্চি লম্বা; তুখোড় ইংরেজি বলে। নিজস্ব ব্যবসায় আছে। যদিও দাড়ি নেই। বাবাকে বারবার করে বুঝিয়ে বলা হলো, ছেলের কাছে যেন অবশ্যই জানতে চাওয়া হয়––সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মতো আদায় করে কি না। ছেলের রূপে-গুণে মুগ্ধ পাত্রীর বাবা কেবল বলেছিল ‘নামাজ-কালাম পড়া হয় নাকি বাবা?’
উত্তরে পাত্রের বাবাও হালকা স্বরে বলেছিল ‘আরে, হ্যাঁ মশাই। নামাজ-কালাম কে না পড়ে? হে হে…’
কিন্তু বিয়ের কিছুদিন আগে নিপা বুঝতে পেরেছিল এ তার স্বপ্নের ছেলেটি নয়। সে তো খুব বেশিকিছু চায়নি––শুধু পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা চরিত্রবান ভালো মনের একজন পুরুষ চেয়েছে।
কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে, এখন আর যেন কিছুই থামানোর নেই। বাবা-মায়ের চাপে কখন যে মনে মনে সে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল নিজেও টের পায়নি। অথচ সে চাইলে কি আরেকটু শক্ত আরেকটু অটল হয়ে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারত না?
জীবনটা নদীর মতো। জীবনের বড়ো বড়ো বাঁকে ভুল করো না হে পথিক। পথ হারিয়ে ফেলবে…
লাল ঘোমটা পরে রাজরানির মতো করে নিপার বিয়ে যেদিন হয়ে গেল, সেদিন থেকেই তার জীবনে বিসর্জনের শুরু। বাবা-মা-পুরনো ঘরদোর ছেড়ে বিয়ের পরেই শ্বশুরবাড়ি, স্বামী-সংসার সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া। জীবনটা একদম বদলে গেল। হুড়মুড় করে কীভাবে দিন গড়িয়ে যায় আজকাল নিপা বুঝতেই পারে না। তার স্বামী মানুষটি চমৎকার! নামাজে-কালামে অতটা মনোযোগী না হলেও খুব উদার আর রোমান্টিক। কয়েকদিন পরপর লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ে। বেশ ভালো লাগে নিপার। তবে আজকাল ওর সালাতটা মাঝে মাঝেই ছুটে যায়। এই তো সেদিন––কীভাবে যেন আসরের সালাতটা ছুটে গেল। ইভানের সাথে একটি কফিশপে একটু ঢুকেছিল। কখন যে সালাতের সময়টা পার হয়ে গেল ও কিছুই টের পেল না। বাইরে বেরিয়ে দেখে সন্ধ্যা….
আবার একদিন, কাজিনের বিয়েতে যাওয়ার জন্য ইভান খুব জোরাজুরি করতে লাগল। নিপার এসব হলুদের অনুষ্ঠান-গানবাজনা, ছেলেমেয়েদের নাচানাচি, ঢলাঢলি একদম ভালো লাগে না; কিন্তু সে তো স্বামীকে কষ্ট দিতে চায় না। স্বামীর ইচ্ছেয় একটি ঘেয়া রঙের শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে গেল। মাগরিবের আযানটা যে কখন পড়ল তা এত ধুম-ধাম আওয়াজের মধ্যে শোনাই গেল না। হঠাৎ খেয়াল হলো সাড়ে সাতটা বাজে! হয়তো দৌড়ে গেলে সালাতটা তখনো ধরা যেত। কিন্তু কী জানি একটি আলস্যই হয়তো ঘিরে ধরেছিল তাকে। উঠে গিয়ে শাড়ি তুলে মেইক-আপ মুছে ওযুর দৃশ্যটি মনে মনে কল্পনা করে নিপা ভেবে নিল সে বাসায় গিয়েই একসাথে ঈশা আর মাগরিবের কাযা সালাতটা পড়ে নেবে…। অথচ আগে হলে এমনটি কল্পনাও করতে পারত না। কত বদলে গেছে সবকিছু––পুরনো পরিবার, পুরনো ঘরদোরের সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকেও বোধ হয় বিসর্জন দিয়েছে নিপা…
‘গল্পগুলো অন্যরকম’ বই থেকে নেওয়া…
There are no reviews yet.