হামাস – ফিলিস্তিন—এক নতুন সংগ্রামের উত্থান হামাস

ইহুদিদের আছে বিপুল অর্থবিত্ত-বৈভব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ব্রিটেনকে প্রস্তাব দিল—ফিলিস্তিন তো তোমাদের দখলেই আছে, সেখানে আমাদের জন্য একটি রাষ্ট্র বানিয়ে দাও। যুদ্ধে তোমাদের যা লোকসান হয়েছে, আমরা সব পুষিয়ে দেব। বোমা তেরির দুর্লভ একটি উপকরণ—কৃত্তিম ফসফরাস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির পক্ষে ব্রিটিশরা যখন প্রায় পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন ইহুদি বিজ্ঞানী ডক্টর চিমওয়াইজম্যান (প্রাক্তন ইসরাইল-প্রেসিডেন্ট) এই পদার্থটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার তৈরি এ উপকরণ যুদ্ধের সময় অনেক কাজে আসে ব্রিটিশদের। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তারে কাজে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করেন—এর বিনিময়ে তিনি কী পুরস্কার চান। ডক্টর ওয়াইজম্যান উত্তরে বলেন—‘কোনো অর্থ নয়; আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড নির্মাণে আপনারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন। আর সেটা হবে ফিলিস্তিনের মাটিতেই। ব্যস, আর কিছু লাগবে না’।…

…এল ১৯৬৭ সাল। আবারো বাঁধলো আরব-ইসরাইল-যুদ্ধ। আরবরা দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছিল; কিন্তু ইসরাইলিদের গোপন ষড়যন্ত্র রুখবে কে? এরা আগে থেকেই আরব রাষ্ট্রগুলোতে ছড়িয়ে রেখেছিল অনৈক্য আর বিভেদের বীচ; তার ওপর আছে তাদের শক্তিশালী গোয়েন্দা-তৎপরতা। আরবদের পূর্বপরিকল্পনা গোয়েন্দা-মারফত মুহুর্তেই পৌঁছে যেত তেলআবিবে। ৬ দিনের যুদ্ধে আরবরা আবারও পরাজিত হল; হারাতে হলো আরো নতুন কিছু ভূখণ্ড। মিসরের অধীনে থাকা সিনাই উপত্যকা, সিরিয়ার অধীনে থাকা গোলান মালভূমি এবং জর্ডানের অধীনে থাকা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেম ইসরাইলিরা দখল করে নেয়। আর এর মধ্যে দিয়েই মুসলিমদের প্রাণের শহর, অগণিত নবি-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত নগরী পবিত্র আল-কুদসে ইহুদিদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। ফিলিস্তিনি মুসলিমরা হয় চূড়ান্ত লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার। সেই যাতনা-বঞ্চনা আর না পাওয়ার হাহাকারে আজও ভারী হয়ে আছে ফিলিস্তিনের আকাশ-বাতাস। এর ভেতরে পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্রে বহু পরিবর্তন এসেছে; জর্ডান নদীতে কলকল রব তুলে গড়িছে কত জল; কিন্তু হতভাগ্য আল-কুদস (জেরুসালেম) আর ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসেনি। জোর-জুলুম, নির্যাতন আর পরাধীনতার গ্লানিতে আজও তারা ক্লান্ত-শ্রান্ত। তাই বলে যে তারা থেমে আছে, এমন নয়। তাদের সংগ্রাম আর প্রতিরোধ-আন্দোলন সদা চলমান। বঞ্চনা-লাঞ্ছনার আগুনে পুড়তে-পুড়তে তাদের কেউ কেউ হঠাৎ জ্বলে ওঠে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি রূপে, আর পৃথিবী অবাক হয়ে দেখে তাদের প্রতিরোধের অভিনব ভাষা এবং স্বরূপের অগ্নিমূর্তি। ফিলিস্তিনে এমনই এক নতুন সংগ্রামের উত্থান—ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস)।