মুসলিম সেনাবাহিনীর মুতার যুদ্ধের ঘটনা। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে আল্লাহ আসমার প্রিয়তম, জীবনের স্পন্দন স্বামীকে শাহাদাতের জন্য কবুল করে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার গৃহে এলেন। চেহারায় ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত।
আসমা অনুভব করতে পেরেছিলেন কিছু একটা হয়েছে! হৃদয় কেঁপে উঠছিল তার। অন্তরের মাঝে এক অজানা ভয় কষ্ট দিচ্ছিল নিরন্তর।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ইয়াতিম বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে তাদের শরীরের ঘ্রাণ নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন পরম মমতায়। পবিত্র চোখ দুটি বেয়ে নেমে এলো অশ্রুধারা।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁদছেন! ‘হাবিবুল্লাহ! কীসে আপনি এত ব্যথিত?’
আসমা কাছে এলেন। তার হৃদয়ে আশঙ্কা। মনে মনে যা ভয় করছিলেন তা-ই বুঝি হলো। ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক! কী আপনাকে কাঁদাচ্ছে? জাফর বা তার সাথিদের কোনো সংবাদ পেয়েছেন কি?’
‘হ্যাঁ, তারা আজ মারা গিয়েছে।’
প্রিয়তমকে হারিয়ে আসমার হৃদয় ভেঙে চুরমার। বিচ্ছেদের বেদনায় কেঁদে উঠলেন তিনি। দুজনার হৃদয় ছিল এক সুতোয় গাঁথা। আজ সে বাঁধন ছিঁড়ে জাফর পাড়ি জমিয়েছেন অন্য জীবনে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিধবা সাহাবিকে সান্ত্বনা দিলেন। দুআ করে দিলেন।
আমাদের প্রিয় আসমা সবর করলেন। ধৈর্যধারণ করলেন। রবকে আঁকড়ে ধরলেন হৃদয় দিয়ে। কষ্ট ঢেকে নিলেন দুআর চাদরে। সাওয়াব কামনা করলেন তীব্র মনেঃকষ্টের বিনিময়ে৷ স্বামী যেমন আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন, তেমন শহিদ হওয়ার জন্য দুআ করে চললেন।
একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে তার ছেলেকে সালাম দিয়ে বলেন—’হে দুই ডানাওয়ালার ছেলে, আসসালামু আলাইকা।’
আসমা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর মর্মার্থ বুঝতে পারলেন। তার স্বামী দুটি কাটা হাত দিয়ে তাওহিদের পতাকা উড্ডীন করে রেখেছিলেন, যাতে তা জমিনে পড়ে গিয়ে পদদলিত না হয়। সেই দুটি হাতের পরিবর্তে আল্লাহ তাকে দুটি ডানা দিয়েছেন। এ ডানা দুটিতে ভর করে তিনি যেখানে ইচ্ছে উড়ে যেতে পারেন। প্রিয়তমা বুঝতে পারলেন তার প্রিয়তম এখন জান্নাতে উড়ে বেড়াচ্ছেন।
‘জীবন যদি হতো নারী সাহাবির মতো’ বই থেকে নেওয়া কিয়দংশ…
There are no reviews yet.