অনুবাদকের কথা
.
দিনের সব ব্যস্ততা ও কোলাহল শেষে রাতের বিছানায় পিঠ এলিয়ে কি কখনো ভেবেছেন, জীবনের মানে কি? কাকডাকা ভোরে শিশিরভেজা ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে কি কখনো নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন, কে আপনি? কী আপনার পরিচয়? কেন আপনি এসেছেন এই মায়ার জগতে? জীবনের সমস্ত কোলাহল ছাপিয়ে কখনো কি নিজেকে নিজে সময় দিয়েছেন কয়েকটি মুহূর্ত? কখনো কি নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করেছেন, কেমন আছেন আপনি? প্রযুক্তির সকল যান্ত্রিকতাকে ত্যাগ করে কখনো কি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে নিজে কথা বলেছেন? আসলে জীবনের নানা রকম ব্যস্ততা, গ্লানি আর ক্লান্তিতে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ভুলে যাই। ব্যস্ততা, কাজ, দায়িত্ব, সম্পর্ক ইত্যাদির নিচে চাপা পড়ে যায় আমাদের ভেতরের সত্তাটা। জীবনের ভারী বোঝা বইতে বইতে আর দায়িত্বের চাপ সামাল দিতে দিতে আমরা ভুলেই যাই যে, আমার ভেতরে একটা অন্যরকম ‘আমি’ এর বসবাস আছে। এভাবেই পরিচর্যার অভাবে অবহেলায় বড় হতে থাকে আমার ভেতরের সত্তাটা। একসময় সেখানে ধুলোর আস্তরণ পড়ে। পরিচর্যার অভাবে জন্ম হয় নানা রকম আগাছা। জন্ম হয় হতাশা, লালসা, হিংসা ও অহমিকার মতো ভয়ংকর সব ব্যাধি। এসবের ছোবলে একসময় বাহিরের আমিও চরম ক্ষতির শিকার হই। অপ্রীতিকর সব মুহূর্তের সম্মুখীন হই।
.
স্বার্থের এই জগতে আমার রবের পর আমিই আমার সবচেয়ে বেশি আপন। অথচ সেই আমাকেই আমি কতটুকু সময় দিই? কতটুকু যতœ নিই নিজের ভেতরটার? যিনি আমার নিজের চেয়েও আপন তার সাথে আমার কী রকম বোঝাপড়া? এসবের কিছুই আমরা ভাবি না। ভাবার মতো সময় বা সুযোগও আমরা নিজেরা নিজেদেরকে দিই না। কিন্তু এভাবে আর কত দিন নিজেকে নিজে নষ্ট করব? ব্যস্ততার ফাঁকে অন্যের জন্য, পরিবারের জন্য, শারীরিক চিকিৎসা ও বিনোদনের জন্য আমরা সময় বের করতে পারি। কিন্তু সময় দিতে পারি না আমার ভেতরের আত্মাটাকে। আশপাশের সবাই যখন ঘুমের জগতে হারিয়ে যায়, শুধু আকাশের তারাগুলো জেগে থাকে—তখন আমরা খুব গোপনে ঘুম থেকে জাগতে পারি না। রবের সাথে নিজের আত্মার সম্পর্কটাকে ঝালাই করে নিতে পারি না। তাই তো জীবনের সব চাহিদা পূরণ হওয়ার পরও আমাদের ভেতরটা কেমন খালি খালি অনুভূত হয়। চারিদিকে কেমন শূন্যতা বিরাজ করে।
.
‘নবজীবনের সন্ধানে’ আপনাকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। নিজেকে নিয়ে ভাবার একটু সুযোগ করে দেবে। শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাজালি তার এই গ্রন্থকে জীবনের নির্যাস দিয়ে সাজিয়েছেন। উন্মুক্ত ও উদার একটি দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলেছেন। বিশেষত বর্তমান সময়ের হতাশগ্রস্ত তরুণদেরকে উজ্জীবিত করতে চেষ্টা করেছেন। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শাইখের নিজস্ব একটি ধারা রয়েছে। তিনি সময়ের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। নতুন প্রজন্মের সামনে তাদের ভাষায় ইসলামকে উপস্থাপন করেন। তাই তার লিখিত গ্রন্থগুলো আরব বিশ্বে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করে আছে। বাংলা ভাষায় অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা খুবই সামান্য। সেই প্রয়োজনবোধ থেকে আমরা তার ‘জাদদিদ হায়াতাকা’ নামক গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষীদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। ‘নবজীবনের সন্ধানে’ গ্রন্থটি সেই চেষ্টারই ফসল।
.
শাইখের এই গ্রন্থে তিনি নতুন ধারায় ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন। পশ্চিমা বিশ্বের জনপ্রিয় লেখক ডেল কার্নেগির বিখ্যাত বই ‘How to stop worrying start living’ এর আলোকে তিনি বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করেছেন। কখনো কখনো ইসলামের সাথে ডেল কার্নেগির থিউরির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। তাই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে বস্তুবাদী পৃথিবীর চিন্তাগত ও আত্মিক দৈন্যের চিত্র। প্রমাণিত হয়েছে, আজকের পৃথিবী ইসলাম ব্যতীত দেউলিয়া। জগতের সকল মানুষ—বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ জনগণ—এক অসামান্য পিপাসা নিয়ে জীবনযাপন করছে। ইসলাম ছাড়া সেই পিপাসা মেটানোর সাধ্য জগতের কোনো ধর্ম বা দর্শনের নেই।
.
অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি যথাসম্ভব সরল ও সুখপাঠ্য করার চেষ্টা করেছি। কিতাব ও সুন্নাহর অনুবাদ নিজস্ব ধারায় করার চেষ্টা করেছি। যে সকল হাদিসের রেফারেন্স শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাজালি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন আমরাও সেগুলো উল্লেখ করেছি। ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে বন্ধুবর জোজন আরিফ ও রিয়াজুল ইসলাম প্রয়োজন-বিশেষ সহায়তা করেছেন। আল্লাহ তাদের উভয়কে উত্তম প্রতিদান দান করুন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘শব্দতরু’ তাদের সমৃদ্ধ প্রকাশনা জগতে এই বইটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ কবুল করুন। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাদেরকে আরও বেশি কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। সবশেষে আল্লাহর কাছে বইটির সর্বাত্মক গ্রহণযোগ্যতা কামনা করছি। আল্লাহ সকলের সহায় হোন।
….
নাজমুল হক সাকিব
১০/১১/২০১৯
কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
অনুবাদকের কথা
.
দিনের সব ব্যস্ততা ও কোলাহল শেষে রাতের বিছানায় পিঠ এলিয়ে কি কখনো ভেবেছেন, জীবনের মানে কি? কাকডাকা ভোরে শিশিরভেজা ঘাসে হাঁটতে হাঁটতে কি কখনো নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন, কে আপনি? কী আপনার পরিচয়? কেন আপনি এসেছেন এই মায়ার জগতে? জীবনের সমস্ত কোলাহল ছাপিয়ে কখনো কি নিজেকে নিজে সময় দিয়েছেন কয়েকটি মুহূর্ত? কখনো কি নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করেছেন, কেমন আছেন আপনি? প্রযুক্তির সকল যান্ত্রিকতাকে ত্যাগ করে কখনো কি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে নিজে কথা বলেছেন? আসলে জীবনের নানা রকম ব্যস্ততা, গ্লানি আর ক্লান্তিতে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ভুলে যাই। ব্যস্ততা, কাজ, দায়িত্ব, সম্পর্ক ইত্যাদির নিচে চাপা পড়ে যায় আমাদের ভেতরের সত্তাটা। জীবনের ভারী বোঝা বইতে বইতে আর দায়িত্বের চাপ সামাল দিতে দিতে আমরা ভুলেই যাই যে, আমার ভেতরে একটা অন্যরকম ‘আমি’ এর বসবাস আছে। এভাবেই পরিচর্যার অভাবে অবহেলায় বড় হতে থাকে আমার ভেতরের সত্তাটা। একসময় সেখানে ধুলোর আস্তরণ পড়ে। পরিচর্যার অভাবে জন্ম হয় নানা রকম আগাছা। জন্ম হয় হতাশা, লালসা, হিংসা ও অহমিকার মতো ভয়ংকর সব ব্যাধি। এসবের ছোবলে একসময় বাহিরের আমিও চরম ক্ষতির শিকার হই। অপ্রীতিকর সব মুহূর্তের সম্মুখীন হই।
.
স্বার্থের এই জগতে আমার রবের পর আমিই আমার সবচেয়ে বেশি আপন। অথচ সেই আমাকেই আমি কতটুকু সময় দিই? কতটুকু যতœ নিই নিজের ভেতরটার? যিনি আমার নিজের চেয়েও আপন তার সাথে আমার কী রকম বোঝাপড়া? এসবের কিছুই আমরা ভাবি না। ভাবার মতো সময় বা সুযোগও আমরা নিজেরা নিজেদেরকে দিই না। কিন্তু এভাবে আর কত দিন নিজেকে নিজে নষ্ট করব? ব্যস্ততার ফাঁকে অন্যের জন্য, পরিবারের জন্য, শারীরিক চিকিৎসা ও বিনোদনের জন্য আমরা সময় বের করতে পারি। কিন্তু সময় দিতে পারি না আমার ভেতরের আত্মাটাকে। আশপাশের সবাই যখন ঘুমের জগতে হারিয়ে যায়, শুধু আকাশের তারাগুলো জেগে থাকে—তখন আমরা খুব গোপনে ঘুম থেকে জাগতে পারি না। রবের সাথে নিজের আত্মার সম্পর্কটাকে ঝালাই করে নিতে পারি না। তাই তো জীবনের সব চাহিদা পূরণ হওয়ার পরও আমাদের ভেতরটা কেমন খালি খালি অনুভূত হয়। চারিদিকে কেমন শূন্যতা বিরাজ করে।
.
‘নবজীবনের সন্ধানে’ আপনাকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। নিজেকে নিয়ে ভাবার একটু সুযোগ করে দেবে। শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাজালি তার এই গ্রন্থকে জীবনের নির্যাস দিয়ে সাজিয়েছেন। উন্মুক্ত ও উদার একটি দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলেছেন। বিশেষত বর্তমান সময়ের হতাশগ্রস্ত তরুণদেরকে উজ্জীবিত করতে চেষ্টা করেছেন। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শাইখের নিজস্ব একটি ধারা রয়েছে। তিনি সময়ের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। নতুন প্রজন্মের সামনে তাদের ভাষায় ইসলামকে উপস্থাপন করেন। তাই তার লিখিত গ্রন্থগুলো আরব বিশ্বে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করে আছে। বাংলা ভাষায় অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা খুবই সামান্য। সেই প্রয়োজনবোধ থেকে আমরা তার ‘জাদদিদ হায়াতাকা’ নামক গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষীদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। ‘নবজীবনের সন্ধানে’ গ্রন্থটি সেই চেষ্টারই ফসল।
.
শাইখের এই গ্রন্থে তিনি নতুন ধারায় ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন। পশ্চিমা বিশ্বের জনপ্রিয় লেখক ডেল কার্নেগির বিখ্যাত বই ‘How to stop worrying start living’ এর আলোকে তিনি বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করেছেন। কখনো কখনো ইসলামের সাথে ডেল কার্নেগির থিউরির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। তাই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে বস্তুবাদী পৃথিবীর চিন্তাগত ও আত্মিক দৈন্যের চিত্র। প্রমাণিত হয়েছে, আজকের পৃথিবী ইসলাম ব্যতীত দেউলিয়া। জগতের সকল মানুষ—বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ জনগণ—এক অসামান্য পিপাসা নিয়ে জীবনযাপন করছে। ইসলাম ছাড়া সেই পিপাসা মেটানোর সাধ্য জগতের কোনো ধর্ম বা দর্শনের নেই।
.
অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি যথাসম্ভব সরল ও সুখপাঠ্য করার চেষ্টা করেছি। কিতাব ও সুন্নাহর অনুবাদ নিজস্ব ধারায় করার চেষ্টা করেছি। যে সকল হাদিসের রেফারেন্স শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাজালি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন আমরাও সেগুলো উল্লেখ করেছি। ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে বন্ধুবর জোজন আরিফ ও রিয়াজুল ইসলাম প্রয়োজন-বিশেষ সহায়তা করেছেন। আল্লাহ তাদের উভয়কে উত্তম প্রতিদান দান করুন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘শব্দতরু’ তাদের সমৃদ্ধ প্রকাশনা জগতে এই বইটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ কবুল করুন। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাদেরকে আরও বেশি কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। সবশেষে আল্লাহর কাছে বইটির সর্বাত্মক গ্রহণযোগ্যতা কামনা করছি। আল্লাহ সকলের সহায় হোন।
….
নাজমুল হক সাকিব
১০/১১/২০১৯
কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
There are no reviews yet.