প্রেসিডেন্ট মুরসি : আরব বসন্ত থেকে শাহাদাত……
তাহরির স্কয়ারে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয়বারের মতো শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যরা সেখানে একটি উঁচু মঞ্চ তৈরি করেছিল। লাখ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে বেশ কিছু নন-ইসলামিস্টও ছিল, সেদিন তাঁর বক্তব্য শুনতে উপস্থিত হয়েছিল।
খুব কম সংখ্যক মিশরিই তাদের জীবনে রক্ত মাংসের কোনো প্রেসিডেন্টকে স্বচক্ষে দেখেছিল। পূর্বের প্রেসিডেন্ট আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ায় এবং নিজেও ১৯৯৫ সালে হত্যাপ্রচেষ্টার শিকার হওয়ায় হুসনি মুবারক জনসমক্ষে প্রায় আসতেন না বললেই চলে। তাকে শুধু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যেত, সব সময় দেহরক্ষীদের ঘন চাদরে আবৃত অবস্থায়।সেই মিশরিদের সামনে এখন এক অগ্রদূত মঞ্চে উপবিষ্ট হয়ে ঘোষণা করলেন, “আল্লাহু আকবার”। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এটি একটি গতানুগতিক ইসলামিস্ট র্যালি। মুরসি সব সময়ের মতো অপ্রতিভ অবস্থায় বক্তৃতার কাগজ এবং মাইক্রোফোন দুটোই এক হাতে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি মঞ্চের ওপর এমনভাবে হাঁটছিলেন, মনে হচ্ছিল তিনি বুঝি অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের হাই টেম্পারেচার কন্ডাকটিভিটি নিয়ে লেকচার দিতে যাচ্ছিলেন।“হে মুক্ত বিশ্ব, আরব জনগণ, আমার ভাই ও বোনেরা, পুত্র ও কন্যারা, মিশরীয় মুসলমান এবং খ্রিষ্টান জনগণ, নাগরিকগণ, আপনারা যে যেখানে আছেন, মিশরে কিংবা মিশরের বাইরে, আমরা আজ এখানে এসেছি বিশ্বকে জানাতে- এই হচ্ছে মিশরীয় জনগণ, এরাই হচ্ছে সেই বিপ্লবীরা, যারা এই মহাকাব্য রচনা করেছে, এই বিপ্লব।”আমার মনে হলো আমি মুরসির কণ্ঠে নতুন কিছু শুনছি। তাঁর বক্তব্যে সেদিন ইসলাম কিংবা ইসলামিক আইন বিষয়ে কোনো বক্তব্য ছিল না; বরং তিনি থমাস জেফারসনের শহিদদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার বৃক্ষে পানি দেওয়া সংক্রান্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করেছিলেন।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের, খ্রিষ্টানদের, সেক্যুলার মিশরি এবং শিল্পীদের লক্ষ্য করে কথা বলছিলেন, যারা ইসলামপন্থিদের শাসন নিয়ে ভীত ছিল। তিনি বলেছিলেন, “যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন এবং যারা দেননি, আমি আপনাদের সকলের জন্য। সকলের কাছ থেকে আমার অবস্থান সমান দূরত্বে।”
“আমি আপনাদের কাছে এসেছি। কারণ, আপনারাই হচ্ছেন বৈধতার উৎস। আমার কথা সবাই শুনতে পাচ্ছে- সকল মানুষ, মন্ত্রিসভা, সরকার, পুলিশ, আর্মি। আপনাদের কর্তৃত্বের ওপর আর কারও কর্তৃত্ব নেই। আপনারা যাকে পছন্দ করেছেন, তার হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন। আবার যখন প্রয়োজন মনে করবেন, ক্ষমতা সরিয়ে নেবেন।”
মুরসি জোর দিয়ে বললেন, কোনো ‘সত্তা’ বা কোনো ‘প্রতিষ্ঠান’ জনগণের রায় অস্বীকার করতে পারবে না। কারও বুঝতে বাকি ছিল না, সত্তা বা প্রতিষ্ঠান বলতে তিনি সেনাবাহিনীকেই বুঝিয়েছিলেন।
বক্তৃতার একপর্যায়ে মুরসি এক হাত দিয়ে তাঁর দুই বডিগার্ডকে একপাশে সরিয়ে মঞ্চের একেবারে সামনে চলে আসেন। দর্শকদের কাছ থেকে মাত্র কয়েক ফিট দূরে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর কোট খুলে হাতে নিয়ে নেন।
শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে তিনি বলতে শুরু করেন, “আমার নিজেকে বুলেট থেকে রক্ষা করার মতো কিছু নেই। আমি শুধু আল্লাহ্কে ভয় করি এবং তারপর ভয় করি আপনাদের।” মুরসির শার্টের নিচে আসলেই মুবারকের মতো বুলেটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বডি আর্মার ছিল না।
(বইয়ে সন্নিবেশিত “অভিষেক ও ষড়যন্ত্র” শিরোনামের লেখাটির অংশবিশেষ।
মূল লেখক : ডেভিড ডি. কার্কপ্যাট্রিক
অনুবাদ : Mozammel Hossain Toha
There are no reviews yet.