ধার্মিক মুসলিমগণ সাধারণভাবে কোনো না কোনো ব্যক্তি বা দলের মাধ্যমেই ধার্মিকতার দিক নির্দেশনা পেয়েছেন। এজন্য কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি অধিক মহব্বত থাকা স্বাভাবিক। তবে ব্যক্তি বা দলকে দীন বানাবেন না।
শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর বেলায়াত চান; তবে শিরকের চোরাবালিতে আটকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তার হৃদয় ‘গাইরুল্লাহ’, অর্থাৎ যাকে আল্লাহর ‘মাধ্যম’ বা কারামতের মালিক মনে করেন তার কাছেই আবর্তিত হয়। তাঁর নেক-নযর অনুভব করেন, বিপদে তাঁকেই ডাকেন, নিয়ামত পেলে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন। বিদ‘আতে লিপ্ত ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর অনুসরণ করতে চান; কিন্তু বিদ‘আতের চোরাবালিতে পড়ে তাঁর কাছে যেতে পারেন না। সকল ইবাদতে তাঁর মনে পড়ে ‘গায়রুন্নবী’ অর্থাৎ যাকে বা যাদেরকে তিনি মুরশিদ বা ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল আদর্শ মনে করেন-তাঁর বা তাঁদেরই কথা। তাঁরা যে সকল সুন্নাত গ্রহণ করেছেন সেগুলোই তিনি গ্রহণ করেন; এর বাইরের সুন্নাতগুলো গ্রহণ করতে তার অন্তর সায় দেয় না। মুরশিদের কারণে বিভিন্ন অজুহাতে বিশুদ্ধ সুন্নাতে নববী বা সুন্নাতে সাহাবী পরিত্যাগ তার জন্য সহজ; কিন্তু সুন্নাতের অজুহাতে মুরশিদ বা মুরব্বীগণের তরিকা তিনি পরিত্যাগ করতে পারেন না।
সম্মানিত পাঠক, একইভাবে দলাদলিতে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালবাসতে ও যিকিরের মাজলিস করতে চান। তবে দলাদলির চোরাবালিতে পড়ে যান। তিনি ব্যক্তি বা দলকে ভালবাসা ও সাহচর্যের মাপকাঠি বানান। ফলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আর তাঁর হৃদয়ের সর্বোচ্চ স্থানে থাকেন না। ব্যক্তি বা দলের প্রভাবে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি ছোট পাপ বা পুণ্যকে বড়, বড় পাপ বা পুণ্যকে ছোট এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে জরুরী বলে দাবি করেন।
এজন্য আপনার দল, ফিকহী মত বা পীরের প্রতি মহব্বত-সহ অন্য দল ও মতের অনুসারী কুরআন ও সুন্নাহর মাপকাঠিতে বাহ্যিকভাবে মুত্তাকী মানুষদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাছাই করে তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব করুন, সাক্ষাৎ করুন এবং মাঝে মাঝে তাদের সাথে যিকিরের মাজলিসে উপস্থিত হোন। না হলে নিজের অজান্তেই ‘দীনকে দলেদলে বিভক্ত করার’ মহাপাপে নিপতিত হয়ে যাবেন।
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ
রাহে বেলায়াত , ৬৩৬ পৃ.
There are no reviews yet.