Dark Light
-20%

শনি সাহেব অসুস্থ

Availability:

Out of stock


বই: শনি সাহেব অসুস্থ
লেখক: কামরুল আহমেদ

224.00 280.00

Out of stock

Compare

সত্য সুন্দর। কিন্তু সবাই সেই সত্য হজম করতে পারে না। সত্য দ্বীন ইসলামও তাই কারো মনে বিদ্বেষ জাগায়। অস্বীকার করার বদলে তাই কেউ কেউ হয়ে ওঠে ইসলাম বিদ্বেষী, মুসলিম বিদ্বেষী। ওঁত পেতে বসে থাকে কীভাবে ইসলামের সত্য প্রচার রুখে দেওয়া যায়।

শনি সাহেব, যে কিনা সেই অমীয় সত্যকে বুকে লালন করে, কাজে পালন করে আর শুধরে দিতে চায় অন্যসব মানুষদের, সে তাই সমাজের সত্যবিরোধীদের রোষানলে পড়ে যায়। সমাজ, বিদ্যাপীঠ তাকে অসুস্থ ঘোষণা করে। তবু শনি সাহেবের প্রচেষ্টা কমে না। সত্য প্রতিষ্ঠার যে ব্রত সে নিয়েছে তাকে সে সমুন্নত রাখতে চায়। তাতে তার প্রাণ যাবে যাক। আর শেষটাতে তো তাকে প্রাণে দিতেই হয়।

তাছাড়া শনি সাহেব গরীবের ছেলে, গাঁটে জোর নেই, সমাজপতিদের মত অর্থ-প্রতিপত্তি নেই। তাই শনি সাহেব যে সত্য প্রচারে নিবৃত তা সমাজের সুশীল সমাজ কেনো মেনে নিতে যাবে? এই সমাজে তো সত্যও বিক্রি হয় অর্থের বিনিময়ে ।

কামরুল আহমেদ একজন শনি সাহেবকে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেখাতে চেয়েছেন সত্য সুন্দর এবং তা সবসময়ই সুন্দর থাকবে। আর সত্য যাদের ধাঁতে সয় না তারা লেগে থাকবে সত্যকে গলা টিপে মারতে। কিন্তু সত্য তাতে মিথ্যা হয়ে যাবে না। আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ‘শনি সাহেব অসুস্থ্য’ তাই একটা সাধারণ বই থেকে অসাধারণ বইয়ে পরিণত হয়। এই বই আমাদের সামনে প্রমাণ করে অসুস্থ আসলে কে। শনি সাহেব, নাকি সমাজ?

শনি সাহেব অসুস্থ- একটি রেইনফল পাবলিকেশন প্রয়াস।

 

Weight 0.5 kg

শুক্রবার।
শনির জন্য দিশেহারা মামুন স্যার৷ শনিকে ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছেন তিনি৷ জুমার নামাজের সময়ও তার ফোন দেওয়া বন্ধ নেই৷ আলিয়া বেগম যদিও একবার রিসিভ করে বলেছেন, ‘শনি তো নামাজে গেছে, আসলে বলব৷’ তাতেও তিনি অস্থির, ফোন করেই যাচ্ছেন৷ মামুন স্যারের এক আত্মীয় এসেছেন, তার সাথে দেখা করাতে চান শনিকে৷ তিনি সম্ভবত নামি-দামি মহাজ্ঞানী মানুষ৷ শনি সাহেব মামুন স্যারের বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা পশ্চিমে গড়িয়ে গেল৷ স্যারের গেস্টরুমে ঢুকতেই সে চমকে উঠল৷ সোফায় পা তুলে একজন বসে আছেন৷ পাশেই বসা প্রকাশ পাল৷ তিনি কোলা ব্যাঙের মতো পেট ভাসিয়ে বসে আছেন৷ তার সামনে কাঁচের গ্লাসে হলুদ পানি রাখা আছে৷ গেস্টের চুলগুলো হনুমানের লেজের চুলের মতো মনে হলো শনির কাছে৷ দীর্ঘ চুলে কান ঢেকে আছে৷ মুখটা মনে হয় বয়স্ক বড়ইগাছের বাকলের মতো খাবলা খাবলা চামড়া ওঠা৷ সম্ভবত প্রতিদিন তিনি ব্লেড দিয়ে দাড়ি-মোচ ছেঁটে রাখেন৷ শনি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে সালাম দিল,
: ‘আসসালামু আলাইকুম।’

শনির মনে হলো, সালাম দেবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গোখরা সাপের মতো ফুঁসে উঠলেন; কিন্তু কেন? শনি দু পা এগিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম।’

শনি এবারও চরম হতভম্ব৷ লোকটার চোখ যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ৷ যে কোনো সময় সেই অগ্নি শনিকে ভস্ম করে দেবে৷ মামুন স্যার শনির দিকে এগিয়ে কানের ওপর মুখ রেখে ফিসফিসিয়ে বললেন,
: ‘শনি’
: ‘জি।’
: ‘বিখ্যাত জ্ঞানী মানুষ তিনি৷ সালামের উত্তর দেন না৷ কোনো কুসংস্কারের স্থান নেই তার কাছে৷’

শনি অবাক হয়৷ হা করে তাকিয়ে থেকে ‘ওহ’ শব্দ করে শনি পেঁচার মতো মুখ করে তাকায়৷
মামুন স্যার গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বললেন, ‘তার নাম জানে না, এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ তিনি বিখ্যাত জ্ঞানীদের একজন৷ ফেসবুকে আয়িশা বিবি নাম শুনছ না শনি, তিনি সেই আয়িশা বিবি আইডির মালিক।’

শনি হা করে তাকিয়ে থাকে৷ এ রকম হতভম্ব তাকে আর কখনোই দেখা যায়নি৷ সে বলল, ‘হ্যাঁ! কী বলেন স্যার?’

কৌতূহলী চোখে আয়িশা বিবির দিকে তাকিয়ে থাকে শনি৷ তারপর তার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘দিদি, আপনার মুখে কি দাড়ি? দেখে তো তাই মনে হয়৷ জানেন দিদি, এর আগে আমি খবরের কাগজে এক নারী দেখেছি, তার মুখে গোঁফ ও দাড়ি৷’

সম্ভবত দিদি আয়িশা রেগে যাচ্ছেন৷ তিনি রাগী চোখে মামুন স্যারের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ মনে হচ্ছে মামুন স্যারকে আস্ত চিবিয়ে খাবেন৷ নারী মানুষ যে এত তেজী হয়, জানা ছিল না৷
প্রকাশ পাল বললেন, ‘শনি, তুমি কথা না বলে তার কাছে থেকে কিছু শোনো, শেখো৷ তিনি বিখ্যাত জ্ঞানী৷ বিজ্ঞান ও আধুনিকতার কথা বলেন, এগিয়ে যাবার এগিয়ে নেবার মন্ত্র দেন।’

শনি আয়িশা বিবির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দিদি, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন? আমি শনি৷ ফেসবুকে মাঝে মাঝে কথাবার্তা হতো আপনার সাথে৷ এই তো সেদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বললেন, “আমার দেহ আমার ইচ্ছা৷ আমি আমার বুক ঢেকে রাখব নাকি খুলে রাখব, সেটা আমার একান্ত ইচ্ছা৷ তাতে কার কী?”

দিদি, সেদিন আপনার সাথে তর্ক করা ভুল হয়ে গেছে৷ আমি নাম দেখে ভেবেছিলাম আপনি নারী; কিন্তু এখন দেখি শুকনা খড়ি৷ আপনার অবস্থা দেখে সত্যি করুণা হচ্ছে৷ এ জন্য বলি, কেন আপনি বলেন, আমার বুক আমি উন্মুক্ত রাখব, তাতে অন্যের কী? দিদি আপনি সব খুলে রাখলেও ক্ষতি নেই, বিশ্বাস করেন কোনো ক্ষতি নেই৷ আপনি যে নারী বোঝা যায় না৷’

মামুন স্যার শনির কানের কাছে মুখ এনে বললেন, ‘বার বার তাকে দিদি বলছ কেন হ্যাঁ? তিনি পুরুষ৷ তিনি বিখ্যাত জ্ঞানী দেবাশিষ রয়৷ এবার বুঝতে পেরেছ?’

: ‘মানে? তিনি ফেসবুকের আয়িশা দিদি না?’

শনি এবার তাকে বলল, ‘দিদি, আপনি দিদি না? আমি একদিন বললাম, দিদি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেন৷ আপনি রিপ্লাই দিলেন, বলুন৷ সেই দিন কিন্তু বলতে পারতেন আমি দিদি না দাদা।’

শনি এবার মামুন স্যারের দিকে ফিরে বলল, ‘স্যার,বিখ্যাত মানুষ হতে কি দাদা থেকে দিদি হতে হয়? দিদির বুক উন্মুক্ত করার আগে তার নাম প্রকাশ করা বেশি জরুরি৷ কি বলেন!’

প্রকাশ পাল রাগ চেপে ধরে আছেন৷ তিনি ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন, ‘শনি, তিনি বিখ্যাত জ্ঞানী মানুষ৷ তার মুখের কথা অমূল্য রতন৷ তিনি কী বলেন, আগে মন দিয়ে শোনো৷ তাহলে ধর্মের আবর্জনা থেকে বের হতে পারবে৷’

: ‘জি স্যার৷’
আয়িশা বিবি বললেন, ‘কুরআন যে মানুষের লেখা তার বড় প্রমাণ দেখো৷ সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছু নেই তার প্রমাণ দেখো৷’

শনি হা করে দিদিকে দেখেই যাচ্ছে৷ দিদি সম্ভবত অস্বস্তিবোধ করছেন৷
তিনি বললেন, ‘কখনো মানুষ দেখনি?’
: ‘আপনাকে আগে দেখিনি তো দিদি! আচ্ছা ভালো কথা ফেসবুকে এখন থেকে আপনাকে দিদি না দাদা বলে ডাকব?’

আয়িশা বিবি এবার তীরের মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মামুন স্যারের দিকে তাকায়৷ মামুন স্যার নীরবে ঢোক গিলে বললেন, ‘আগে শোনো তিনি কী মূল্যবান কথা বলেন! তার কথা শোনার জন্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, বুঝলে!’

শনি মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, ‘আচ্ছা, বলা শুরু করুন আয়িশা দিদি!’

দেবাশিষ রয় চটে গেলেন৷ বললেন, ‘বার বার তুমি দিদি বলছ কেন হে?’
: ‘কেন দিদি, আপনাকে কি দিদি বলা যাবে না? ফেসবুকে তো সবাই দিদি বলেই ডাকি৷ ওহ বুঝেছি, ফেসবুকে আপনাকে দিদি বলব, সামনাসামনি দাদা বলব৷ তাই তো?’

দেবাশিষ রয় তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মামুন সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ মনে হচ্ছে আস্ত তাকে গিলে খাবেন৷ বললেন,
: ‘কোথায় থেকে পাগল ধরে আনলেন মামুন সাহেব? পাগল মানুষ করা যায়?’

শনি সাহেব আমতা আমতা কণ্ঠে বলল, ‘আচ্ছা দিদি, আপনাকে আর দিদি বলব না৷’

অস্বস্তিতে ভুগছে দেবাশিষ রয়৷ তিনি বললেন, ‘দেখো, কত বড় ভুল কুরআনে বলছে। সূরা আম্বিয়া : ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি সৃষ্টি করেছে দিবা ও রাত্র এবং চন্দ্র ও সূর্য। উভয়ই আপন অক্ষে আবর্তন করে৷ তাহলে কুরআন বলছে ভনভন করে পৃথিবীর চারদিকে সূর্য ঘুরছে৷ অথচ বিজ্ঞান বলে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে৷ তাহলে এটা কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল৷’

: ‘দিদি, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ভনভন করে ঘোরে-এর আরবি কী হবে?
আয়িশা বিবি এবার মামুন স্যারের দিকে বড় চোখে তাকিয়ে থাকে৷ শনি নীরবে ঢোক গিলে বলল, ‘ওকে দিদি, শুধু বলেন ভনভন-এর আরবি শব্দ কী হবে?’

মামুন স্যার রাগ চাপা রেখে বললেন, ‘আরবি জেনে কী করবে, হ্যাঁ? হাতেনাতে জ্বলন্ত প্রমাণ পেলে, এবার ভাব ধর্ম পালন করবে কি করবে না।’
শনি কপাল ভাঁজ করে বলল, ‘দিদি।’

প্রকাশ পাল বললেন, ‘বার বার কেন তাকে দিদি বলছ?’

: ‘স্যার, তাকে দাদা বললে যদি মাইন্ড করেন! ফেসবুকে তিনি দিদি নামে পরিচিত৷’

: ‘মাইন্ড করবে না৷ দাদাই বলো৷’
: ‘আচ্ছা! আচ্ছা দাদা, আপনি জানেন না, সূর্যের অক্ষ ও কক্ষপথ আছে৷ এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করত সূর্য গতিশীল৷ পৃথিবী স্থির৷ বিজ্ঞানীদের এই থিওরি কয়েক বছর চলে৷ পরে এই থিওরি স্ট্রোক করে মারা যায়৷ পরের থিওরি এলো পৃথিবী গতিশীল এবং সূর্য স্থির৷ অথচ কুরআন বলছে সূর্য গতিশীল৷ এই দ্বিতীয় থিওরি শুনে পাতি নাস্তিকদের সে কি ব্যাং নাচ! বলে কুরআন ভুল৷ অথচ তৃতীয় বিজ্ঞানের থিওরি এলো, পৃথিবী আপন কক্ষে আবর্তন করে এবং সূর্যও তার অক্ষ ও কক্ষপথে আবর্তন করে৷ সূর্য ঘণ্টায় ৭ লক্ষ কি.মি. বেগে আবর্তন করে৷ যা একবার আপন কক্ষপথ ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে ২২ কোটি বছর৷ অথচ সপ্তম শতাব্দীতে পবিত্র আল-কুরআন বলেছে—আমি সৃষ্টি করেছি দিবা ও রাত্র এবং চন্দ্র ও সূর্য৷ উভয়ই আপন কক্ষপথে বিচরণ করে৷ এখানে তো পৃথিবীর নাম গন্ধও নেওয়া হয়নি৷ তাহলে দাদারা দিদি সেজে কোথায় পায়, ভনভন করে সূর্য পৃথিবীর চার পাশে ঘোরে?’

আয়িশা বিবি মামুন স্যারের ওপর রেগে আগুন৷ তিনি বলেন, ‘মামুন সাহেব! পাগল ছাগল কোত্থে ধরে এনেছেন?’


“শনি সাহেব অসুস্থ”
লেখক – Kamarul Ahamad

একটি রেইনফল প্রয়াস…

Based on 0 reviews

0.0 overall
0
0
0
0
0

Be the first to review “শনি সাহেব অসুস্থ”

There are no reviews yet.

You may also like…

SHOPPING CART

close