Dark Light

ভিন্নমতের নান্দনিকতা

Availability:

Out of stock


বইঃ ভিন্নমতের নান্দনিকতা
লেখক : সালমান আল আওদা

400.00

Out of stock

Compare
ইখতিলাফ একটি ঐশ্বরিক রীতি যতক্ষণ না মানুষ তা নিজেদের হাতে সঙ্কুচিত করে ফেলে। তবুও মানুষ অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকে, কবে এইসব ইখতিলাফের অবসান ঘটবে? আর আমরা কবে সকলে মিলে ঐক্যমত্যে পৌঁছাব?
উত্তর হলো, মানুষের মাঝের এই ইখতিলাফ ও বৈচিত্র্য চিরদিন টিকে থাকবে, যতদিন আল্লাহ মানুষকে এর উত্তরাধিকার মালিক বানাতে থাকবেন। সুতরাং সমস্ত মানুষ ঐক্যমত্যে পৌঁছবে এমন স্বপ্ন দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিবাদের এই পরিক্রমা ঐশ্বরিক প্রজ্ঞাময় উদ্দেশ্যের সাথেই জড়িয়ে আছে। ভেবে দেখেন, প্রত্যেকটা জিনিস যখন একই রকমের হয় তখন সেগুলো কতটাই বিরক্তিকর, অনর্থক একঘেয়েমি ঠেকে! তাই কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ (هود: 118).
إِلاَّ مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (هود: 119).
যদি আপনার রবের ইচ্ছা হতো তাহলে সমস্ত মানুষকে তিনি এক উম্মত বানাতে পারতেন। কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে। (হুদ : ১১৮)
তবে যার উপর আপনার রবের রহমত আছে (সে ছাড়া)। আর এইজন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর এর ফলে আপনার রবের এই বাণীও পূর্ণ হবে যে, আমি জিন ও মানুষের সকালের দ্বারাই জাহান্নাম পূর্ণ করব। (হুদ : ১১৯)
সুতরাং মতানৈক্য হলো একটি ভাগ্যকেন্দ্রিক বাস্তবতা, যা মানুষের স্বভাবগত ও সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পৃক্ত। এর বিভিন্নতা নির্ভর করে মানুষের বৈচিত্র্য-বৈশিষ্ট্যর ওপর, আকৃতির ওপর, বর্ণের ওপর, ভাষার ওপর, দৃষ্টিকোণের ওপর। মানব-মনের প্রকৃতিই হলো একাধিক বেছে নেওয়ার যোগ্যতা থাকা যাতে সে সৎ ও অসৎ, শুকর ও কুফরের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে পারে, পছন্দের ভিত্তিতে নিজের পথ ও পন্থাকে নির্বাচন করতে পারে। তাই তো মানুষের মাঝে রয়েছে ভালো ও খারাপ, ন্যায়পরায়ণ ও পাপী, মুমিন ও কাফের, শক্তিশালী ও দুর্বল, জ্ঞানী ও মুর্খ, আমানতদার ও খেয়ানতকারী, সদয় ও নির্দয়, অনুসরণকারী ও অনুসরনীয়, ন্যায়বিচারক ও জালেম, ভুলকারী ও সঠিককারী ইত্যাদি সব ধরণের লোক। যদিও এই গুণগুলোর কিছু শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য আবার কিছু নিন্দনীয়।
মতভেদ অপসারণ করার কি কোনো পন্থা আছে?
যদি মনে করে থাকেন, অধিক তত্ত্ব আর দলীল প্রমাণ মতভেদ দূর করার পেছনে ভূমিকা রাখে, তাহলে বলব আপনি আগে এই ধারণাটি দূর করুন। কারণ, এই কথা যদি সত্যই হতো তাহলে সবচেয়ে জ্ঞানী, কুরআন ও সুন্নাহের সবচেয়ে বুঝদার, ইখলাছের দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, প্রবৃত্তির অনুসরণে সবচেয়ে দূরবর্তী এমন মানুষ তথা সাহাবিদের তো আপনি পেয়েই গেছেন। অথচ তাদের মাঝেও ইখতিলাফ ও মতভেদ ছিল। এমন কোনো গবেষক নেই যিনি ইমামদের ইখতিলাফ আলোচনা করতে গিয়ে সাহাবিদের মাঝের মতভেদের কথা আলোচনা করেননি। সাহাবিদের মাঝে ইখতিলাফের অনেক উদাহরণ রয়েছে।
যেমন আনসার সাহাবিদের মাঝের এক দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে কোরআনে এসেছে,
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا…(الحجرات: 9)
মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিবে… (হুজুরাত : ৯)
একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাহাবীদের মাঝে এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছিল। এই দ্বন্দ্বের মূলে ছিল ইসলাম পূর্ব আউস ও খাজরাজের মাঝে বিদ্যমান পুরোনো বিবাদের প্রভাব। (সাহিহুল বুখারি : ২৬৯১), (সহিহ মুসলিম : ১৭৯৯), (আল দুররুল মানসুর : ১৩/৫৫৩-৫৫৮)
এমন আরেকবার রাসুল (সা.) বনি আমর ইবনে আউফের বিবাদের বিষয়ে সমাধান করতে গিয়ে নামাজে আসতে দেরি করে ফেলেছিলেন। তখন আবু বকর (রা.) সাহাবিদের নিয়ে নামাজ আদায় করে ফেলেছিলেন। অর্থাৎ বিবাদ মীমাংসা করতে গিয়ে রাসুলের নামাজে আসতে দেরি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল।
(সাহিহুল বুখারি : ৬৮৩), (সহিহ মুসলিম : ৪২১)
আর রাসুল (সা.)-এর ওয়াফাতের পর সাহাবিদের মাঝে খেলাফত নিয়ে যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে আনসার সাহাবিরা সাকিফাহ বনি সায়াদাহর গৃহে বসে সাদ ইবনে উবাদাহকে পরবর্তী খলিফা প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। পরে কুরাইশদের থেকে খলিফা হওয়ার হাদিসটি সামনে এলে আবু বকর (রা.)-এর খলিফা হওয়ার ব্যাপারে সকলে ঐক্যমত হন। (সাহিহুল বুখারি : ৬৮৩০), (মুসনাদে আহমাদ : ১৮), (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/৮১-৯৩)
ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়েও এ নিয়ে সাহাবিদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। তাদের সকলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে হবে নাকি শুধু যারা রাসুলকে অস্বীকার করেছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, যারা জাকাতকে অস্বীকার করেছিল তাদের জন্য কি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে? সেসময় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল। তারপর যখন আবু বকর (রা.) (…أمرت أن أقاتل الناس) হাদিসটি দ্বারা রাসুলের সুন্নতকে স্পষ্টত ব্যাখ্যা করলেন তখন প্রশ্ন উত্থাপনকারী সাহাবিরা বুঝলেন নামাজ ও জাকাতের মাঝে পার্থক্যকারীর বিরুদ্ধে আবু বকর (রা.)-এর অবস্থান কতটা শক্তিশালী,
তারা বুঝলেন তিনি কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে তারা আবু বকর (রা.)-এর সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। ভিন্নমত পোষণকারীদের মধ্যে ছিলেন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)ও ছিলেন। অবশেষে সকলের ইজমা হয়েছিল আবু বকর (রা.)-এর মতের ওপরে। (সাহিহুল বুখারি : ৬৯২৪, ৬৯২৫), (সহিহ মুসলিম : ২০), (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৯/৪৩৭)
এরকম আরও অনেক শররি বিষয় ও ঘটনা ঘটেছিল যা সাহাবিদের মাঝে প্রথমে অনৈক্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে তারা অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যমত্য হয়েছেন। বিশেষত বড়ো ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে। তখন এমনসব ফিকহি ও জ্ঞানগত মাসআলার বিষয়ে ইখতিলাফ একের পর সামনে আসছিল যেগুলোর অকাট্য কোনো ভাষ্য সবার সামনে উপস্থিত ছিল না, যার উৎস ছিল অনাবিষ্কৃত বা অস্পষ্ট।
এমনই ঘটেছিল দ্বীন সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী, উম্মতের শ্রেষ্ঠ কাণ্ডারি, সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি তথা সাহাবিদের সাথে, তাহলে আমাদের সাথে কেমন হওয়ার কথা?
শিঘ্রই আসছে : মতবিরোধের নান্দনিকতা
লেখক : সালমান আল আওদা
Weight 0.5 kg

Based on 0 reviews

0.0 overall
0
0
0
0
0

Be the first to review “ভিন্নমতের নান্দনিকতা”

There are no reviews yet.

You may also like…

SHOPPING CART

close