স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গণতন্ত্রের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। গণতন্ত্র রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করে এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রয়োগ করে। ইসলামী রাষ্টব্যবস্থায় বিচার বিভাগ শাসন বিভাগের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করার নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহর আইনকে তার বান্দাদের ওপর জারী করাই হচ্ছে বিচারকের কাজ। তিনি আদালতের আসনে খলীফার প্রতিনিধি হয়ে বসবেন না; বস্তত তিনি আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে আসীন হবেন। এ কারণে ইসলামে আদালতের সীমার মধ্যে স্বয়ং খলীফার পদমর্যাদারও কোনো গুরুত্ব থাকবে না। ইসলামের প্রথম খলীফা সাইয়িদুনা আবূ বাকর (রা) এর খিলাফত কালে সাইয়ুদুনা উমর (রা) ছিলেন প্রধান বিচারক। তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করতেন। এ ব্যাপারে তিনি আবূ বাকর (রা) এর মতেরও কোনো গুরুত্ব দিতেন না এবং আবূ বাকার (রা) ও তার বিচারকার্যের মাধ্যে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতেন না। একবার দুজন লোক এসে আবূ বাকর এর কাছে উমার (রা) এর ফায়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তখন আবূ বাকর (রা) অত্যন্ত বলিষ্টকণ্ঠে তাদের বললেন ” আমি নতুনভাবে এমন কিছু করতে পারবো না, যা উমার (রা) রদ করে দিয়েছেন। ”
কাযী শুরাইহ ইবন হারিছ (রা) ছিলেন সাইয়িদুনা উমার ও আলী (রা) এর আমলে কুফার বিচারক। নিরপেক্ষ বিচার ছিল তার নীতি। বিচারের ক্ষেত্রে তিনি না খলীফা উমার (রা) কে পরওয়া করতেন, আর না আলী (রা) কে। বর্ণিত রয়েছে, একবার খলীফা আলী (রা) তার আদালতে একটি বর্মের দাবি নিয়ে এক ইয়াহুদীর বিরুদ্ধে মুকাদ্দমা দায়ের করেছিলেন। খলীফা আলী (রা) এর পক্ষে সাক্ষী ছিলেন হাসান ও হুসাইন (রা)। তারা দুজনেই তার পুত্র হওয়ার কারণে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ না করে কাযী শুরাইহ (রা) ইয়াহুদীর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। ঘটনা দেখে ইয়াহুদী চিৎকার করে বলে উঠল – কাযী সাহেব, আপনি আমীরুল মু’মিনীনের বিরুদ্ধে ফায়সালা দিলেন, আর তিনি বিনা বাক্যে তা মেনে নিলেন। বাস্তবিকই আপনাদের দ্বীন ইসলাম সত্য। এ কথা বলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ফেললেন। আর সাইয়িদুনা আলী (রা) তার ইসলাম কবুল করায় এতটা আনন্দিত হলেন যে, তিনি বর্মটি তাকে দিয়ে দিলেন। এ-ই ছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; যা দুনিয়ার সামনে ইসলাম পেশ করেছিল।
* গণতন্ত্র: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, বই থেকে।
There are no reviews yet.