ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আবির্ভাব এমন এক সময়ে ঘটেছিল, যখন দুনিয়ার মুসলমান রাষ্ট্রনীতির দিক দিয়ে মঙ্গোলীয়দের নিষ্ঠুর হত্যালীলার প্রবল আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, আর ধর্মের দিক দিয়ে অসংখ্য নতুন নতুন ইসলাম বিরোধী মতবাদ ইসলামের বুনিয়াদি আকিদাগুলোকে সমূলে বিনষ্ট করেছিলো। কবরপূজা, ব্যক্তিপূজা, উরুসবাজি এবং অন্যান্য বাতিল চিন্তাধারা ও কুসংস্কার ঈমানের অংশ হয়ে পড়েছিল এবং ইসলামের বিশুদ্ধ ধারণা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মুসলিম জাহানের এহেন কঠিন দুরবস্থা ও সর্বব্যাপী ভাঙ্গনের সময় ইমাম ইবনে তাইমিয়া আবিভূত হয়ে এসব ফাসিদ ও বাতিল আকিদা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন কলম ও মুখের দ্বারা, হাত ও তরবারি দ্বারা। দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছিলেন, বিপদের আকাশছোঁয়া তুফানের মধ্যে নির্ভীকচিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বন্দী হয়েছেন, কারাগারে দুঃসহ জ্বালা অকাতরে সহ্য করেছেন; সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য রাজা বাদশাহ ও আমির ওমারার বিরোধিতা করে তাদের চক্ষুশূল হয়েছেন। তিরস্কার, নির্যাতন, অপমান, উৎপীড়ন, নীরবে বরদাশত করেছেন। বদনাম ও কুখ্যাতি খরিদ করেছেন। কিন্তু এসবের মধ্যে তিনি দৃঢ়সংকল্প একাগ্রচিত্ত ও একনিষ্ঠ হয়ে, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বীরত্ব ও নির্ভীকতা এবং অটল আদর্শবাদিতার নজির দেখিয়েছেন। কারো তিরস্কার ও রক্ষচক্ষুতে তিনি কখনও ভীত ও শঙ্কিত হননি।কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বিশ্ব মানবতাকে দেখিয়ে গেছেন সত্যের জন্য আত্মদান কাকে বলে, ঈমানের তেজস্বিতা ও প্রকৃত ধার্মিকতার বাস্তব পরিচয় কি!
ইমাম ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে এসব উক্তি বাস্তবপক্ষে কোন কাব্য নয়, অমূলক উচ্ছ্বাস ও নয়। এটা ধ্রুব সত্য কথা, ঐতিহাসিক ভিত্তিযুক্ত কাহিনি! তার মৃত্যুর পর ৭/৮ শতাব্দী অতীত হয়ে গেছে, আজও তার বহুমূল্য গ্রন্থমালা একদিকে মিসর, হিজাজ ও ইরানের অসংখ্য লাইব্রেরীর শোভা বর্ধণ করছে। আর অন্যদিকে বার্লিন, লন্ডন, ফ্রান্স ও রোমের সংখ্যাতীত পাঠাগারের গৌরব বৃদ্ধি করছে।
তিনি লেখনী চালিয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করে শরীয়তে ইসলামকে নতুনভাবে উজ্জ্বল করে তুলেছেন, সত্য ও ন্যায়ের সিরাতুল মুস্তাকিমকে আরো একবার রওশন করেছেন এবং গোমরাহির মরুভূমিতে বিভ্রান্ত পথিকদের মহান রবের হুকুমত কবুল করার জন্য উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু শুধু এতটুকু করে তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং সে সঙ্গে উন্মুক্ত শাণিত তরবারি হাতে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এমন বীরত্ব ও বিক্রমের পরিচয় দিয়েছেন যে, দুনিয়া বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে।
তিনি তার তেজদীপ্ত বক্তৃতা দ্বারা দেশের চারদিকে নব জীবনের এমন প্রবাহ বয়ে দিয়েছেন, যে তাঁতার পশুগুলোর স্পর্ধা বিক্রমকেও এটার সম্মুখে প্রতিরুদ্ধ হয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছে। মোটকথা লেখনি, প্রতিভা, বক্তৃতাশক্তি এবং বাস্তবক্ষেত্র ধারণ করে যুদ্ধ করবার বিক্রম আল্লাহর প্রদত্ত এই সবকয়টি শক্তিকেই সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করার জন্য ব্যাপকভাবে চেষ্টা করে গিয়েছেন। তার বিস্তারিত জীবনকাহিনী তা সাক্ষ্য দিবে।
( বিস্তারিত জানতে বইটি পড়ুন)
There are no reviews yet.