শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিম হাফিযাহুল্লাহ রচিত ‘Seeds of Rightousness’ বইয়ের অনুবাদ দেখে মনে হয়েছিল এর ছায়া অবলম্বনে নতুন করে লিখতে হবে। কিন্তু তখন বুঝিনি, কোনো পাণ্ডুলিপির ছায়া অবলম্বনে নতুন একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করা আমার জন্য কত কঠিন। এমন কঠিন কাজটা কেন করতে গেলাম তা একটু পরে বলছি। আগে বলে নিই কীভাবে করলাম–
সবার প্রথমে নিজেকে একটা ফ্রেমে বন্দি করে ফেলেছিলাম আমি৷ নিজেই নিজের চারপাশে সীমানার দাগ কেটে নিয়েছিলাম, পণ করেছিলাম এই দাগের বাইরে যাব না। এমনভাবে লিখব না, যেভাবে লিখলে মূল পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায়। অর্থাৎ আমি শুধু আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে মূল রচনার গায়ে নতুন পোশাক পরিয়েছি৷ কখনো দুটি গল্পের শিক্ষাকে একত্র করে, কখনো একটি গল্পের শিক্ষাকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো গল্প লিখেছি।
এবার আসা যাক মূল কথায়। এই কঠিন কাজটা কেন করতে গেলাম আমি? এর কারণ বইটির বিষয়বস্তু।
মেয়েদের জীবন নিয়ে আমাদের কিছু ছকেবাঁধা গতানুগতিক চিন্তা আছে৷ সেই চিন্তার বাইরে কিছু করতে গেলে আমরা বলে বসি, ‘কী দরকার? ফরয ইবাদত করলেই তো জান্নাত!’
আবার কারও কারও চিন্তা একদম ছকের বাইরে। ফরয ইবাদত থেকে লক্ষ্য সরিয়ে নিয়ে হলেও যেন নফল ইবাদত করা চাই-ই চাই!
সবসময় মনে হতো, এসবের মাঝামাঝি কি কিছু নেই? ভুলত্রুটি আর বেশুমার গুনাহ ঢাকতে কিছু নফল ইবাদত করলে ক্ষতি কী? আবার ফরয বাদ দিয়ে নফলের পিছে ছুটেই-বা কী লাভ?
ঠিক এই চিন্তা থেকেই পাণ্ডুলিপিটা নিয়ে কাজ করবার লোভ সামলাতে পারিনি। শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিম নেক আমলের ঝুলি সমৃদ্ধ করতে এমন সব অভিনব পন্থা বাতলে দিয়েছেন যে, আমার মনে হয়েছে, যেভাবেই হোক এটা পাঠকের কাছে পৌঁছানো উচিত। মেয়েদের কাছে অন্তত এই বার্তাটুকু যাক—ইসলামে কোনো নারীই ‘অনাহূত’ নন। এখানে সব নারীর জন্যই নেক আমলের দুয়ার খোলা।
ওই যে শুরুতে বলেছিলাম, নিজেকে একটা ফ্রেমে বেঁধে ফেলেছি, এ জন্যই কাজটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কঠিন কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে উৎসাহ আর আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করেছে আমার সহোদরা। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
এ বইটিতে আমার লেখার ধরন কিংবা গল্পের গাঁথুনি খুব একটা উচ্চমার্গীয় না হলেও আশা রাখি, কেউ না কেউ বইটা পড়ে উপকৃত হবে, ইন শা আল্লাহ। অন্তত একজনও যদি বইটি পড়ে, তাহলে হয়তো নিজের ইবাদত, আমল নিয়ে ভাবতে পারবে নতুন করে। দৈনন্দিন কাজগুলো দেখতে পারবে ইবাদতের চোখে। আর তার সাওয়াবের ভাগীদার হব আমিও। দিনশেষে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।
-আফিফা আবেদীন সাওদা
‘কাজের মাঝে রবের খোঁজে’ বইটি নিয়ে লেখিকার অনুভূতি।
There are no reviews yet.