বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় একটি মিথ্য প্রচারণা আমাদের সমাজে ছড়ানো হয় যে, দীনী ইলম ফকীরী বিদ্যা বা মাদ্রাসায় পড়লে জাগতিক উন্নতি হয় না। এর চেয়ে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা আর কিছুই হতে পারে না। স্কুল কলেজে যারা ভর্তি হয় তাদের বৃহৎ অংশ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। যারা পারে তাদেরও অনেকেই বেকার থাকে বা ভাল চাকরী পায় না। পাশাপাশি সমাজে হাজার হাজার আলিম প্রফেসর, ডাক্তার, আইনজীবী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মুহাদ্দিস, শিক্ষক অত্যন্ত সম্মান ও শান্তির সাথে বসবাস করছেন। মেধা, যোগ্যতা ও সামগ্রিক পরিবেশের উপরে ব্যক্তির জাগতিক উন্নতি নির্ভর করবে। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে মাদ্রাসা বা স্কুল যেখানেই পড়ুক সে সম্মানজনক স্থানে পৌঁছাবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সামান্য উন্নতির লোভে আপনি আলিমের পিতা হওয়ার ও নেক সন্তানের দুআ পাওয়া এত বড় সুযোগ ছেড়ে দেবেন? আপনার সন্তানকে জাহান্নামে দেওয়ার ও নিজে জাহান্নামে যাওয়ার রিস্ক নিবেন?
খুতবাতুল ইসলাম, ১৩২ পৃ.
আমরা রামাদানকে বিদায় জানাতে চলেছি। কিন্ত কিভাবে? বিশ্বাসঘাতকতার সাথে না বিশ্বস্ততার সাথে। রামাদান এসেছিল কুরআন, সিয়াম, কিয়াম ও তাকওয়া উপহার নিয়ে। আমরা কি রামাদানের সাথে এগুলিকেও বিদায় করে দেব? তাহলে রামাদানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো। রামাদানের হাদিয়া ভালবেসে গ্রহণ করুন। কুরআন ছাড়বেন না। কত কষ্ট করে সারা মাস তারাবীহে কুরআন শুনলেন। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে এ শোনার আনন্দ, তৃপ্তি ও সাওয়াব আরো অনেক বেশি হতো। কুরআনের নূরে হৃদয় আলোকিত হতো। আসুন সকলেই নিয়্যাত করি, আগামি রামাদানের আগে একবার অন্তত পূর্ণ কুরআন অর্থ সহ পাঠ করব। যেন আগামী রামাদানে তারাবীহের সময কুরআন শোনার সময় অন্তত কিছু বুঝতে পারি।
সিয়াম ছাড়বেন না। রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم বিভিন্ন হাদীসে বলেছেন যে, আল্লাহর সন্তষ্টি, রহমত, বরকত ও রূহানিয়্যাত অর্জনের জন্য নফল সিয়াম অতুলনীয় ইবাদত। প্রতি মাসে তিন দিন, বিশেষত প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার, যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন, বিশেষত আরাফার দিন, আশূরার দিন এবং তার আগে বা পরে এক দিন সিয়াম পালন করার অসীম ফযীলত ও সাওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। রামাদানের পরেই শাওয়াল মাস। ১লা শাওয়াল আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি। ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী ২৮/২৯ দিনের মধ্যে ৬টি রোযা রাখার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم বলেন:
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
“যে ব্যক্তি রামাদান মাসের সিয়াম পালন করবে। এরপর সে শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়াম পালন করবে, তার সারা বৎসর সিয়াম পালনের মত হবে।”
কিয়াম ছাড়বেন না। কিয়ামুল্লাইলের সাওয়াব ও ফযীলত শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জমা করলেও একটি বড় বই হয়ে যাবে। যদি শেষ রাত্রে না পারেন তবে অন্তত প্রথম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, দু চার রাকাত সালাত আদায় করবেন। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, প্রতি রাতে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ বা ৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে, রাত ১০/১১ টা থেকে দুআয় কবুলের ও রহমত-বরকতের সময় শুরু হয়। সারাদিন যে ভাবেই কাটান না কেন, অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার আগে দু-চার রাকাআত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে সামান্য সময় আল্লাহর যিকির ও দরুদ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে সারাদিনের গোনাহের ক্ষমা চেয়ে ও নিজের সকল আবেগ আল্লাহকে জানিয়ে ঘুমাতে যাবেন।
তাকওয়া ছেড়ে দেবেন না। রামাদানের পরে ইবাদত বন্দেগী কিছু কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্ত তাই বলে মুমিন ইচ্ছাকৃতভাবে পাপের পথে ফিরে যেতে পারেন না। তাহলে তো রামাদানের সকল পরিশ্রম বাতিল করে দেওয়া হলো। আর নিজের কষ্টে অর্জিত কর্ম নষ্ট করার মত পাগলামী আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ বলেন:
وَلا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا
“তোমরা সে (উন্মাদিনী) মহিলার মত হয়ো না যে তার সুতা মযবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে নষ্ট করে ফেলে।”
কষ্টের আমল রক্ষা করতে আমাদের রামাদানের তাকওয়া রক্ষা করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে।
There are no reviews yet.