“রায়হান আর রাফসান জমজ দুইভাই। দুইজনেই একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। তারা একই রংয়ের ড্রেস পড়লে উভয়কে পার্থক্য করা দায়। পিতা-মাতার স্বপ্ন – দুজনই ভালো মুসলিম হবে। রায়হান চুপচাপ স্বভাবের কিন্তু রাফসান কিছুটা চঞ্চল। উভয়ে প্রচুর বই পড়ে। রাফসান ইদানিং ব্রাটান্ড রাসেলের কিছু বই পড়েছে। এতেই নাকি সংশয়বাদী হয়ে গেছে। রাসেল নাকি তার গুরু। ইসলামকে অনন্য ধর্মের সাথে তুলনা শুরু করছে। ইসলামের সকল কার্যক্রম নাকি অন্যন্য ধর্মের মতো কতগুলা অনুষ্ঠানের নাম। এতে নাকি কোনো অর্থবহ কোনো ম্যাসেজ নাই। এসব শুধু করার জন্যই নাকি করা। নামাজকে সে শুধু কতগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মের ‘ইয়োগা’ ব্যায়াম মনে করে। হজ্জ্ব নাকি হিন্দুদের তীর্থ যাত্রা আর কম্ভুমেলার মতো মিলনমেলা। আরো আরো আজগুবি তুলনা শুরু করছে সে।
রায়হান কিছুটা চিন্তিত। তার সামনেই তার প্রিয় ভাইটার অধঃপতন হচ্ছে। সে প্রায়ই তাহাজ্জুদে তার জন্য দো’আ করে যেন আল্লাহ তাকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করে। ইসলাম কিন্তু দো’আ করার পাশাপাশি দাওয়াহ দিতে নির্দেশ দেয়। এই মূলনীতিটি মাথায় রেখে, ছুটির দিনে রাফসানের সাথে ইসলামের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করল।
রায়হানঃ- তুই ইসলামের কার্যক্রমসমূহ যুক্তি আর প্রশ্ন দিয়ে বিচার করতে চাচ্চিস, ভালো কথা। তবে মনে রাখবি- যখন কেউ তোর জ্ঞানের সমপর্যায়ের হবে তখনই তুই তার কাজের পিছনে যুক্তি খুঁজতে পারবি, প্রশ্ন করতে পারবি। আল্লাহ যেহেতু আমাদের চেয়ে অসীম পর্যায়ের জ্ঞানী, তাই তার নির্দেশিত বিষয়ে প্রশ্ন করা বাতুলতা মাত্র। উনার নির্দেশ যা, আমরাও পালন করব তা। তবুও যেহেতু ইসলামের প্রতি সন্দেহের প্রশ্ন দানা বেঁধেছে, আমি চেষ্টা করব সদউত্তর দিতে। কোন বিষয় সম্পর্কে আগে জানতে চাস?
রাফসানঃ- আমি আগে নামাজ সম্পর্কে বুঝতে চাই। আমার প্রথম প্রশ্নঃ- নামাজের আগে গোসল না করে অজু করি কেন? গোসলেই পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন হয়। অজুতে পবিত্রতা পরিপুর্ণতা পায় না। সুতরাং অজুটা অনর্থক।
রায়হানঃ- তুই যে পবিত্রতার কথা বলছিস, তা কিন্তু বাহ্যিক পবিত্রতা। নামাজে কিন্তু আত্মিক ও বাহ্যিক পবিত্রতা – দুইটারই প্রয়োজন। বাহ্যিক হচ্ছে কাপড়, শরীর, নামাজের স্থান পবিত্র থাকতে হয়। আর আত্মিক হচ্ছে – কুলি করলে মুখ দিয়ে যে সকল গুনাহ করেছিস, তা ধুয়ে যায়। এভাবে অজুতে হাতের গুনাহ ফিনিশ। পা, মাথা বাকি সবই ধৌত করার সময় একই জিনিস ঘটে, আত্মিক পবিত্রতা লাভ হয়।
রাফসান উত্তরটা শুনার সময় রায়হানের হাতে একটি বই লক্ষ্য করল।
রাফসানঃ-হাতে বইটা কিসের? নিশ্চয় উত্তরটা এখান থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছিস?
রায়হানঃ- হুম,বইটার নাম “কীভাবে নামাজে মধুরতা লাভ করা যায়?” বইটার (১৪-১৫) তম অধ্যায়ে অজু সম্পর্কে আরো নতুন নতুন মজার বিষয় জানতে পারবি। একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী। বইটাতে অজু নিয়ে মজার মজার তথ্য আছে। যদি তথ্যগুলো মাথায় রেখে অজু করিস, তখন বুঝবি অজু কতটা প্রশান্তিদায়ক।
মনের শান্তি চেহারায় উজ্জ্বলতা দিয়ে আভাস দিবে।
রাফসানঃ- ‘আল্লাহু আকবর’ বলার সময় হাত নাড়ানো, এটাতে কী বুঝায়? আর এটি বারবার মুখে আওড়ানোর পিছনে কী কারণ? প্রথমে বলার কারণ কী? এ সময় হাত উঠাই কেন? এটি কি হিন্দু ধর্মের মন্ত্র রিচ্যুয়ালের নকল নয়, যার কোনো অর্থ নেই। নিশ্চয় তোর হাতের বইটিতে প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই। হা হা।
রায়হানঃ- আছে। এর আগে কিছু কথা বলে রাখি। নামাজের ভিতরের অংশগুলো প্রতীকি অর্থ বহন করে। ‘আল্লাহু আকবর’ বলা প্রতীকি, কিন্তু তাৎপর্য বিশাল। আমরা বুঝি ‘আল্লাহ বড়’। এটি সম্পূর্ণ নয়। এখানে ‘আকবর’ অর্থ অধিকতর বড়। তিনি অন্য সবার চেয়ে বড়, মহান। তার মতো আর বড় নেই। তোর সব প্রশ্নের উত্তর আছে বইটিতে। ১৬তম অধ্যায় একটু ভালো করে পড়িস, তাহলে সব উত্তর পেয়ে যাবি। তাকবীরের আধ্যাত্মিক দিক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পাবি।
রাফসান মনে মনে ভাবছে, এই বইটার জন্য কোন দিক দিয়ে আটকাতে পারছি না। এখন থেকে এমন এমন প্রশ্ন করব, জীবনেও সে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয় নি।
রাফসানঃ- আমাকে রকু, সেজদা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বল। রুকুতে অর্ধনমিত অবস্থান কেন? আর সিজদায় আমরা এমন করি কেন? সেজদা আগে কেন, রকু আগে নয় কে?
রায়হানঃ- রকুতে শরীর সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থায় থাকে। হালকা ধাক্কাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এই অবস্থাও আল্লাহ’কে বলছি, দুর্বল অবস্থাও আপনার ইবাদত চলবে। আর সেজদাতে নাক আর কপাল মাটিতে ঠেকে দিই। নাক সম্মানের প্রতীক, কপাল গৌরবের। দুইটাকে আল্লাহ’র জন্য নিবেদন করাই সেজদার উদ্দেশ্য।
আচ্ছা, তুই কোন ক্যাটাগরির প্রশ্ন করবি আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে। রকুতে, সেজদায় তাসবীহ কেন পড়ব? বৈঠক কেন করব? সুরা ফাতেহা বারবার পড়ি কেন? এসব প্রশ্নই তো, ঠিক কিনা?
রাফসানঃ- হুম, ঠিক তাই। এগুলা আমি ক্লিয়ার হতে চাই।
রায়হানঃ- তোর সব প্রশ্নের উত্তর বইটিতে আছে। বইটি তোকে উপহার দিলাম। পড়ে আমাকে অনূভুতি জানাবি কিন্তু।
বইটি নেওয়ার পর একসাপ্তাহ রাফসানের কোন খোঁজ নেই। এদিকে রায়হানও চিন্তিত। মনে মনে আল্লাহ’র কাছে দো’আ করছে, আল্লাহ যেন এই বইটির মাধ্যমে নামাজ-ইসলাম সম্পর্কে সঠিক বুঝ দান করে। হঠাৎ একদিন রাফসান এসে রায়হানকে জড়িয়ে ধরল। রায়হান দেখল রাফসানের চেহারায় একটি প্রশান্তির ছটা ঝিলিক দিচ্ছে।
মনে মনে ভাবল নিশ্চয় বইয়ে কাজ হইছে, আলহামদুলিল্লাহ।
রাফসানঃ- আল্লাহ তোকে উত্তম জাযাহ দান করুক। বইটি পড়ে সত্যিই আমার নামাজ সম্পর্কে আর কোনো সন্দেহ-ই নেই। অনেক ভালো মানের একটি বই। বইটি আরো আগে পড়লে অতীতের এতগুলা নামাজ আর বাদ পড়তো না। তবুও আল্লাহ’র শুকরিয়া বইটির মাধ্যমে নামাজের হেকমত আমার কাছে ক্লিয়ার। যখন নামাজে বইটিতে দেওয়া সাজেশান্সগুলো ফলো করি তখন নামাযে প্রশান্তি খুঁজে পাই। আলী (রাঃ) নামাজের ঘটনাটা প্রথম আশ্চর্য মনে হলেও এখন আর মনে হয় না।”
মিশারী আল-খারাজের “কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়?” নিয়ে রিভিউটি লিখেছেন – নাজিম উদ্দিন।
আমাদের দেখা মতে, বাংলা এবং যেকোনো ভাষায় খুশু-খুযুর উপর, আল্লাহর সাথে প্রশান্ত সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে এর চেয়ে বিশাল ও বিস্তৃত টপিকে এরকম বই আর হয়নি – আলহামদুলিল্লাহ। মোট ৩৭টি অধ্যায়ে ৩৬১ পেইজের অনন্য একটি বই।
There are no reviews yet.