একজন মহিলা, তার স্বামী আর সন্তান, এই নিয়ে ছোট্ট সংসার। স্বামীর এক কলিগ তাদের বাসায় আসত। একপর্যায়ে স্বামীর কলিগের সাথে মহিলা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তার স্বামী সারাদিন কাজে ব্যস্ত, স্বামী সাহেবের ইয়া বড় বড় বালাম পুস্তক পড়া, তিনি রাত জেগে জেগে ইংরেজী নাটকের অনুবাদ করতেন, কিন্তু খোঁজ রাখতেন না স্ত্রীর মনের। কিন্তু স্বামীর কলিগ সাহেব মনোযোগ সহকারে মহিলাটির ছোটবেলার গল্প শুনতেন, কান পেতে মহিলাটির বকবকানি শুনে যেতেন, যা তার স্বামী এই দাম্পত্য জীবনে শোনার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটিই বোধ করেনি। এভাবে দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশে চলতে থাকে তাদের জীবন। বুদ্ধদেব বসুর একটা উপন্যাস আছে এই ধরণের একটি গল্প নিয়ে। (বুঝতে পারলেও কেউ উপন্যাসটির নাম বলবেন না, প্লিজ। এর কন্টেন্ট সবার জন্য উপযোগী নয়) সমাজে চলমান সমস্যাকে কলমের খোঁচায় নিজ দর্শনের চশমায় দেখে কাগজে দৃশ্যমান করেছেন। সূক্ষ্মভাবে পরকীয়াকে করেছেন গ্লোরিফাই। তবে গল্পের এই চিত্রটি আমাদের চোখের আড়ালে থাকলেও তা একেবারে মিথ্যে নয়। স্বামীদের নিষ্ঠুর, নির্মম, অসহনীয় আচরণে অনেক মহিলারাই জড়িয়ে পড়ছেন অনৈতিক কাজে। অল্প অল্প হলেও তা আমাদের সামাজিক সমস্যা, উম্মাতেরই সমস্যা। আমাদের এদেশের কয়েক হাজার কেন কয়েক লাখ মহিলাকে তারা তাদের স্বামীদের প্রতি পূর্ণ সন্তুষ্ট কিনা জিজ্ঞেস করলে মনে হয়না ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যাবে। কমপক্ষে মহিলা মহিলাদের কথাবার্তায় তাদের এইসব আফসোস উঠে আসে। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক বাদ দিলেও আগের থেকে পরিবার ব্যবস্থা অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়ে গেছে। অনেক ভাই-ই তার ছোট ভাই কোন ক্লাসে পড়ে তা আমতা আমতা না করে একবারে বলতে পারেনা। কত পরিবারে বাবা-ছেলের মাঝে দিনের পর দিন কথা হয়না, একসাথে খাবার খাওয়া হয়না, হয়ে উঠেনা একসাথে বসে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করা। আর সোশ্যাল মিডিয়ার আঘাতে এই সম্পর্কগুলো আর ঠুনকো আর আলগা হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। মেহমান আসার নাম শুনলে অনেকের ৪৪০ ভোল্টের শক খাওয়ার মত অবস্থা হয় অনেকের। পারস্পরিক ‘খাঁটি’ উষ্ণতা, দয়া, ভালোবাসা, আর্দ্রতা সে তো এখন ডুমুরের ফুলের মত। যেখানে পরিবার ব্যবস্থা ও পারস্পরিক মেলবন্ধন ছিলো ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য সেখানে মুসলিমরা দ্বীনকে স্রেফ শবে কদর-মেরাজ-বরাতে আটকে ফেলার কারণে দ্বীনের অন্যান্য দিকগুলো চোখের সামনে থেকে অস্বচ্ছ বা একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে।
.
কিন্তু প্রিয় রাসুলুল্লাহর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদর্শ কি বলে এ বিষয়ে? রাসূল একাধারে ওহীবাহক রাসূল, রাষ্ট্রনেতা, ইবাদাতকারী হওয়াতে কি পরিবারকে ভুলে গিয়েছিলেন? তার স্ত্রীরা কি তার সঙ্গের জন্য ‘হাপিত্যেশ’ করতেন? রাসূল কি তার পরিবারকে এত এত কাজের মাঝে সময় দিতেন? দিতে পারতেন? সময় হত? তিনি কি ঘরে খুব গম্ভীর ‘রাসূল’ ‘রাসূল’ ভাব নিয়ে থাকতেন? তিনি বাহিরে খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বাসায় এসে গাম্ভীর্যের আতিশয্যে গোমড়ামুখো হয়ে যেতেন? তিনি কি স্ত্রীদের সাথে পেয়ারভরা কথাবার্তাকে নিজের ‘রাসূলী’ শানের কথা সাংঘর্ষিক মনে করতেন? তিনি স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করাকে নিজের পৌরুষের বিপরীত মনে করতেন? রাসুলুল্লাহ তার স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণের ব্যক্তি ছিলেন? তিনি কি স্ত্রীদের সাথে রাগ করতেন? অসন্তুষ্ট হতেন? হলে কিভাবে হতেন? চিল্লাপাল্লা করতেন? মারধোর করতেন? নাকি অন্যকিছু করতেন? তিনি কি বাসার সবার সাথে খেতেন? তিনি কি বাচ্চাকাচ্চাদেরকে ‘ঝামেলা’ মনে করতেন? তিনি কি বাচ্চাকাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোকে নিজের দাওয়াত ও জিহাদের কাজে বাধা মনে করতেন? তিনি আত্মীয়দের সাথে কেমন ছিলেন? তার আত্মীয়রা কি তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন? তিনি তার সঙ্গীসাথীদের সাথে কেমন ছিলেন? তার সঙ্গীসাথীদের উনার ব্যাপারে ‘রিভিউ’ কেমন ছিলো? আচ্ছা, তিনি মেহমান হলে কেমন মেহমান হতেন? খাবারের একেবারে চুলচেরা কাটাছেড়াকারী মেহমান? নাকি অন্যরকম? তিনি মেজবান হলে কেমন হতেন? মেহমানকে খাবার দিতে কি উনার দিল ছিঁড়ে যেত? মেহমানদের আপ্যায়ন কি তিনি করতেন? এটা কি উনার নবীওয়ালা শানের খেলাফ হত না?
.
এসব প্রশ্নের উত্তর জানাটা খুব জরুরী। বিশেষ করে এমন একটা সময়ে তো অবশ্যই যেখানে দ্বীন অর্থ হয়ে গেছে খানকায় জিকির করা, জুমুআ আর ঈদের দিন দায়সারাভাবে নামায আদায় করে ইসলামের শেষ ‘টিকি’টুকু বজায় রাখা। যেই সময়ে মুআমালাতের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্বীনকে একাবারে ‘বনবাসে’ পাঠিয়ে দেওয়াই হয়ে গেছে স্বাভাবিক। সেই সময়টায় এসব জানাটা খুব জরুরী। দ্বীনের জন্য যেমন জরুরী, তেমনি দ্বীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রেও অতীব দরকারি। আলহামদুলিল্লাহ, এ বিষয়ে Maktabatul Aslaf ‘নবীজির সংসার’ বের করে করে বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্যের শুন্যতা আরেকটু পূরণ করেছে। সাংসারিক মুআমালাতে রাসুলুল্লাহর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদর্শ জানতে বইটি ইনশাআল্লাহ টেক্সটবুকের মত কাজে দেবে। বইটা যারা বিয়ে করেছেন, সামনেই বিয়ে করবেন, ঘরের কর্তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য একটা বই লেগেছে আমার কাছে। এরকম একটি বই ঘরে ঘরে থাকা ও এর আমল বজায় থাকা একান্ত কাম্য। তবে বইটি পড়ে আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি মানুষের হেদায়াতের জন্য আসলে মানুষ নবী ছাড়া কোনো প্রকার বিকল্প নেই, আর আমাদের রাসূল সত্যই রাসূল ছিলেন, তিনি আমাদের কাছে রহমাতুল্লীল আলামীন হয়ে সত্য দ্বীন নিয়েই এসেছেন। আশা করি যারা পড়বেন তাদেরও এই অনুভূতিই হবে। আল্লাহ তাওফীকদাতা। Abdur Rahman Muaz ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো এত সুন্দর বইটি হাদিয়া দেওয়ার জন্য।
You may also like…
-
আরিফ আজাদ, লেখক, প্রকাশন, সমকালীন
গল্পগুলো অন্যরকম
SKU: n/a
There are no reviews yet.