বইয়ের পর্যালোচনা :
কিছু মানুষ বাড়িতে ফিরে ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা, এমনকি সারা রাত টিভি কিংবা ইন্টারনেটে ব্রাউজিং-এ সময় নষ্ট করে আর তাহাজ্জুদ ছেড়ে দেয়ার পক্ষে হাজারটা অজুহাত দাঁড় করায়। তাদের সেসব অহেতুক কাজের কারণ জিঙ্গাস করা হলে বলে, তার ভালো লাগে বলে তা করে। স্ত্রীর সাথে একা সময় কাটানো আপনাকে আনন্দ দেয়, বন্ধুদের সাথে অলস সময় কাটানো আপনাকে আনন্দ ও প্রশান্তি দেয়। এর কারণ, তাদের সঙ্গ আপনি উপভোগ করেন। বন্ধু চলে যেতে চাইলে বলেন, একটু বস, আমি তোমার সঙ্গ উপভোগ করছি, পারলে আরো কিছুক্ষণ বসে যাও। কেউ যদি আল্লাহর সাথে রাতের বেলা নির্জনে, একাকী সময় কাটানোকে উপভোগ না করে, তাহলে কীভাবে বলা যাবে সে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসে..??
.
বইয়ের এই অংশটুকু পড়ে কিছু সময় ভাবছিলাম, আসলে তো তাই। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রেখোছি কিন্তু আল্লাহর নৈকট্য লাভে সবচেয়ে বড় মাধ্যম তো তাহাজ্জুদ। ঘুমকে যদি সামান্য সময়ের জন্য পরিহার করতে না পারি, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় আমি আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি! তাহাজ্জুদের মাধ্যমে সাহাবি-তাবেয়িরা আল্লাহর প্রতি কতটা ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতো তার অনেকগুলো প্রমাণ এই বই দিয়েছে।
.
যেমন : আবূ জাফর (রহ.) ও আহমদ ইবনু ইয়াহয়িয়া (রহ.) ছিলেন তাদের সময়কার বিখ্যাত আলিম ও আবিদ। তারা দুজন বন্ধু ছিলেন। আবূ জাফর (রহ) বলেন, “আমি একবার আহমাদ ইবনু ইয়াহয়িয়াকে দেখতে গেলাম, গিয়ে দেখি আহমদ কাঁদছে। বললাম আহমদ কাঁদছো কেনো?” সে বললো, “আমি তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারিনি।” আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, “আল্লাহ হয়তো চাইছেন, তুমি একটু অবসর দাও।” আমি তাকে যতই একথা বলে আশ্বস্ত করছিলাম, সে ততই কান্না করছিলে। সে বললো, “না বরং আমার একটি গুনাহের কারনে এমনটা হয়েছে।”
তাহলে এবার পাঠকরা একটু ভেবে দেখুন তো, আমরা কতটা পাপ করলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া নিয়ে ভাবার সময়ই পাই না?
.
আমরা তাহাজ্জুদ নামাজকে এখন এমনভাবে দেখি, যেন এটা পড়লে পড়লাম না পড়লে নাই। কিন্তু এই বইটা পড়লে আপনার ধারনা পাল্টে যাবে। আর আফসোস হবে, আহ! তাহাজ্জুদ তো মাসে একবারও পড়ি না। এই নামজটা দাস-দাসীরাও ফরজের মতো করে দেখতো। যেমন : হাসান ইবনু সালিহ (রহ) তার এক দাসীকে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছিল। সেই দাসীটি নতুন মালিককে ফজর হওয়া আগেই আস-সালাত, আস-সালাত বলে ডাকতে থাকে। কারণ তাকে হাসান ইবনু সালিহ (রহ) এভাবেই অভ্যস্ত করিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন মালিক দাসীকে ফজরের আগে ডাকতে নিষেধ করে দিলো। দাসী বলল, “আপনারা কেবল ফজরের নামাজই আদায় করেন, তাহাজ্জুদ পড়েন না?” তারা বলল, “না।” পরবর্তিতে দাসীটি হাসান ইবনু সালিহ (রহ) এর কাছে গিয়ে বললো, “দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে আনুন, আপনার কিছে ভিক্ষা চাইছি আমাকে ফিরিয়ে নিন, আপনি আমাকে এমন বাজে লেকদের কাছে বিক্রি করেছেন যারা কেবল ফজর সালাত আদায় করে।”
.
বইয়ের বিভিন্ন পাতায় পাতায় তাহাজ্জুদ এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মনস্থিরে বাধ্য হলাম। সর্বশেষ বোনদের জন্য এটি হাদীস বলি, “সেই নারীর ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, যে নিজে রাতে জাগে, ইবাদাত করে এবং স্বাসীকে ডেকে দেয়। আর যদি সে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তার মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙায়। (সুনানু আবী দাঊদ : ১৩১০)
★মতামত : বইটা ছোট হলেও পড়া সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
.
কিয়ামুল লাইল
আহমাদ মুসা জিবরিল
.
লিখেছেন : Rafiq Nayeem Sharder
There are no reviews yet.