#আরেকটি_কারবালা
#আরেকটি_শাহাদাত
#আরেক_হুসাইন
৪ মে। গ্রীষ্মের তীব্র উষ্ণতায় আবহাওয়া ভীষণ রুক্ষ। তার ওপর গণগণে সূর্যের প্রখর রৌদ্র, শত্রুদের সঙ্গে গায়ে গায়ে যুদ্ধ আর রণাঙ্গনের সীমাহীন ব্যস্ততার ভেতর কেটে গেছে যোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রহর। প্রচণ্ড তৃষ্ণার কারণে টিপু সুলতানের বুকের ভেতর ভীষণ পোড়াচ্ছে।
এই দীর্ঘ সময়ে স্রেফ পানিজলের তৃষ্ণা মেটানোর মতো অবসরটুকুও সুলতান পাননি। কারো কাছে থেমে পানি চাইবেন, এক অঞ্জলী পানি নিয়ে বুকের দহন শীতল করবেন― এতোটুকু সুযোগও শত্রুরা সুলতানকে দেয়নি।
সাইয়্যেদ আবদুল গাফ্ফারের শাহাদাতের পর যখন সুলতান যোহরের সময় রণাঙ্গনে ছুটে আসেন তখন তাঁর সঙ্গে তাঁর নওমুসলিম সেবক ‘রাজা খান’ ছিলেন। সুলতানের নির্দেশে সেই সেবক একটি ছোট্ট মশকে পানি ভরে রেখেছিলো।
সুলতান জানতেন না যে, তাঁর এই সেবকও তাঁর জীবন-বাতি নিভিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে ইংরেজদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। যুদ্ধ চলাকালে টিপু সুলতান প্রচণ্ড তৃষ্ণায় বারবার ওই গোলামের কাছে পানি চেয়েছিলেন; কিন্ত ওই হতভাগা নরাধম গোলাম পান করার জন্যে সুলতানকে এক ফোঁটা পানিও দিলো না।
ধীরে ধীরে সুলতানের শরীর ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলো। চরম অবনতি দেখা দিলো। তিনি একটু পরপর কাঁধ বাঁকিয়ে ভীষণ অক্ষমতার সঙ্গে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন যে, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে এক চুমুক পানি দাও’।
আল্লাহ জানেন, এই নরাধমের মন ছিলো কেমন রুক্ষ! সুলতানের বারবার এমন সকাতর অনুরোধ দেখেও তার মনে এক ফোঁটা পানি দেওয়ার ইচ্ছে হলো না।
ইতিহাস সাক্ষী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদরের দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাদি. কুফার ময়দানে প্রচণ্ড তৃষ্ণায় ছটফট করে যেভাবে শহীদ হয়েছিলেন, টিপু সুলতানকেও আল্লাহ তা‘আলা শ্রীরঙ্গাপত্তনামের এই রুক্ষ গ্রীষ্মে সেই সুন্নতের ওপর আমল করার সুবর্ণ তাওফীক দান করলেন। ব্যক্তিজীবনে টিপু সুলতান হযরত হুসাইন রাদি.-এর গভীর অনুরক্ত ছিলেন। যখন টিপু সুলতান কনস্টান্টিনোপলে উসমানি খলীফার দরবারে প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন, তখন তাদের নির্দেশ করেছিলেন― তারা যেন অবশ্যই হযরত হুসাইন রাদি.-এর মাযার যিয়ারত করে আসে।
কী অবাক সৌভাগ্য! টিপু সুলতানের বাবা-মা‘র নামও হযরত হুসাইন রাদি.-এর বাবা-মা‘র নামের অনুরূপ ছিলো।
তাদের দু’জনের শাহাদাতের মাঝেও কী অপূর্ব মিল। দু’জনই মুসলিম নামধারী গাদ্দারদের চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন। ভাগ্যলিপির সাজুয্যের সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আজ টিপু সুলতানও শাহাদাতের অন্তিম মুহূর্তে ছাতিফাটা তৃষ্ণায় হাহাকার করেও এক ফোঁটা পানি পাচ্ছেন না।
There are no reviews yet.