আদম আ. থেকে মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত যত নবি-রাসুল দুনিয়ায় আবির্ভূত হয়েছেন, প্রত্যকেরই মৌলিক ও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব ছিল তাওহিদের দাওয়াত ও তাঁর প্রতিষ্ঠা। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন-
‘আপনার পূর্বে আমি যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তাঁর প্রতিই এ প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতিত অন্য কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কোরো।’ -সুরা আম্বিয়া: ২৫
‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি তাঁর রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দীন (সর্বপ্রকার জীবনব্যবস্থা) -এর ওপর প্রবল করেন; যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে’ -সুরা সফ: ০৯
উপরিউক্ত আয়াতদ্বয় ছাড়াও আরও অনেক নস দ্বারা স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, নবিগণের জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্য ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু ছিল তাওহিদ ও বিশুদ্ধ দীন। তারা তাওহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন; লড়াই করেছেন আমরণ। যেভাবে ঘাম ঝরিয়েছেন, প্রয়োজনে সেভাবে রক্তও ঝরিয়েছেন; নির্দ্বিধ ও নির্দ্বন্দ্ব চিত্তে।
তাওহিদ আকিদার এমন গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট, যার গ্রহণ দিয়ে থাকে পারলৌকিক মুক্তি এবং যার বর্জন প্রদান করে জাহান্নামের স্থায়িত্বের গ্যারান্টি। যা নিজ সত্তায় বাস্তবায়ন করা ও অন্যদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা অত্যাবশ্যক।
সায়্যিদ আবুল হাসান আলি নদবি রহ. একজন ক্ষণজন্মা মনীষী। বিগত শতাব্দীর সর্বমহলে বরিত ও সমাদৃত একজন বিদগ্ধ আলিম। যার রচনা মানেই অনবদ্য সৃষ্টি। তিনি বক্ষমাণ পুস্তিকাটিকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাওহিদ ও শিরকের স্বরূপ এবং তাওহিদ প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকগুলোকে ফুটিয়ে তোলার নিমিত্তে রচনা করেছেন।
বইটি তিনটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত- ১. আলিমগণের দায়িত্ব ২. নবিগণের উত্তরসূরিদের কাজ এবং ৩. দীনের ধারক ও শরীয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্ব। অধ্যায়গুলোর শিরোনাম দেখে স্রেফ আলিমশ্রেণিকে এ রচনার সম্বোধিত মনে হলেও এতে অ-আলিমদের জন্যও রয়েছে অমূল্য রত্ন। আলিম অ-আলিম নির্বিশেষে সকলের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না, নিশ্চিত।
প্রথম অধ্যায়ে তাওহিদ প্রতিষ্ঠার সমূহ প্রতিবন্ধক তথা কুফর, শিরক, বিদআত ও উদাসীনতা সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। যাতে কুফর, শিরক ও বিদআতের তত্ত্বকথার সাথে সাথে হাকিমিয়্যাহর কুফর সম্বন্ধে সুস্পষ্ট আলোচনা উঠে এসেছে, যা এ যুগে ইসলামি পুনর্জাগরণী আন্দোলনের মূলভিত্তি বলে মনে করি। শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক সকল শাসনব্যবস্থা ও মানবরচিত আইনকানুনের কুফর পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা বর্তমান মুসলমানদের যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করা অত্যন্ত জরুরি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমাদের পূর্বসূরিদের অবদান ও শাসকগোষ্ঠীর আচরণ এবং তৃতীয় অধ্যায়ে দীনের ধারক ও শরীয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্ব সম্বন্ধীয় বর্ণনা আলোচিত হয়েছে।
পুস্তিকাটি পাঠকালে মনে হচ্ছিল এ যেন ইবনে তাইমিয়া রহ. ‘র রচনা। ফেভিকল দিয়ে কাগজ সেটে লেখকের নাম আড়াল করে কাউকে যদি বলা হয় এটা নদবি রহ. ‘র বই, আমার বিশ্বাস সম্বোধিত ব্যক্তি কথাটা বিশ্বাস করতে সময় ক্ষেপন করবে। পক্ষান্তরে ইবনে তাইমিয়া রহ. ‘র লিখিত বই বললে যে কেউ চোখ বুজে বিশ্বাস করে নিবে। যেসব লেখা কাফির ও মুশরিকদের অন্তর্জ্বালা, মুরজিয়া ও মোডারেটদের গা জ্বলা ও বক্রমনা ও মুক্তমনাদের চুলকানি সৃষ্টি করে এবং যেসব লেখার বদৌলতে উগ্রপন্থী ও উগ্রচাষী আখ্যা হাদিয়া মিলে, সেসব লেখাই খোল্লামখোলা উঠে এসেছে সর্বমহলে বরিত মনীষী সায়্যিদ নদবি রহ.’র কলমে। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উঁচু স্থানে অধিষ্ঠিত করুন। দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও উন্নত কাগজের ঝরঝরে ও সাবলীল অনুবাদগ্রন্থ উপহার দেয়ায় অনুবাদক ও প্রকাশকসহ বই-সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই অশেষ শুকরিয়া। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে খাইরুল জাযা দান করুন। আমীন।
আজকাল তাগুতকে অস্বীকারের কথা বললে, মানবরচিত সংবিধানের কুফরি তুলে ধরলে, বিদআতের ভয়াবহতা আলোচনা করলে স্বজাতির লোকেরাই তেড়ে আসে। বইটি তাদেরকে কুইনাইন দেবে, এমনকি টনিকও সরবরাহ করবে। যারা চায় জাহিলিয়াতের দুর্গন্ধ দূর করতে; শিরক ও বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে; বিশুদ্ধ আকিদা ধারণ করতে, তাদেরকে বলছি- ‘তাওহিদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে’ বইটি তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করুন এবং নদবি রহ. ‘র কলম থেকে প্রবাহিত আকিদার স্বচ্ছ ঝর্ণাধারায় অবগাহন করুন। উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
There are no reviews yet.