সমতাই কি জাস্টিস? বই নিয়ে দীর্ঘ রিভিউ…
১. পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি নারীর: বৈষম্য নাকি অগ্রাধিকার?
লেখক প্রথমেই একটি ছোট গল্প দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, ভাই কীভাবে বেশি পেয়েও শূন্য হয়, বোন কম পেয়েও টাকা জমায়। এরপর উল্লেখ করেছেন- আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য। যেমন, একজন নারী ১২ অবস্থায় পুরুষের চেয়ে বেশি সম্পদ, ১০ অবস্থায় সমান, ৪ অবস্থায় পুরুষ বঞ্চিত কিন্তু নারী প্রাপ্ত এবং ৪ অবস্থায় কেবল নারী পুরুষের চেয়ে অর্ধেক সম্পত্তি পায়।
কেন এই ৪ অবস্থায় অর্ধেক পায় তার কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। এরপর তুলে ধরেছেন, আমার আপনার মনে জাগতে পারে এমন ৪ টি সম্পূরক প্রশ্ন ও তার উত্তর। উল্লেখ করেছেন, সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল বিষয় নিয়ে- যার জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য।
২. জান্নাতে পুরুষের জন্য হুর; নারীর জন্য কী?
.
প্রথমেই সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন, জান্নাতের কিছু বর্ণনা। এরপর আলোচ্য বিষয়ে মোট পাঁচটি যৌক্তিক উত্তর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মানুষের চাহিদা, ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক তথ্য, সাইকোলজি, জরিপ, নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যসহ আলোচনা করেছেন।
.
এই প্রবন্ধেই উঠে এসেছে, ‘সমতাই কি জাস্টিস?’ নামের যথার্থতা।
.
৩. নারীরা কেন পুরুষের পুরুষের নামাজের ইমামতি করতে পারে না?
.
এখানে যৌক্তিক ও ঐতিহাসিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সর্বমোট ১১ টি উত্তর দিয়েছেন লেখক। নামাজের উদ্দেশ্য, নারীদের অবস্থা, কিয়ামতের ভয়াবহতা, ইমামতির জটিলতা, নারী পুরুষের দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লেখক উত্তর দিয়েছেন। সম্পূরক দু’ একটি প্রশ্নোত্তরও রয়েছে।
৪. সকল নবীই পুরুষ; কোনো নারী কেন নবী নয়?
.
নবীদের দায়িত্বের ভার, তাদের অসম ত্যাগ, সাহস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মোট চারটি যৌক্তিক উত্তর দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে ভালো লেগেছে একটি কথা “সকল নবী পুরুষ হলেও, সকল পুরুষ কিন্তু নবী নয়।” নবুয়তের কঠিন দায়িত্ব পালন না করেও নবীদের থেকে সবচে বেশি সম্মান পেয়েছেন একজন নারী।
৫. পুরুষের বহুবিবাহ: নারীর স্বার্থহানি নাকি স্বার্থপ্রতিষ্ঠা?
.
একজন নারী যিনি তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে রাজি হননি- তিনিই একসময় অন্যের স্বামীকে ভাগাভাগি করে পেতে কতইনা আকুতি জানিয়েছেন- এমন একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়েছে প্রবন্ধটি।
এরপর ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মে যে বহুবিবাহের অনুমোদন রয়েছে সেই আলোচনা এসেছে। নাস্তিকেরা যে বলবে, ধর্মই ঝামেলার যা নারীকে বিপাকে ফেলে- তাই বিশ্বের শীর্ষ ১০ নাস্তিকের ৫ জনের বহুবিবাহের কথা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরুষের বহুবিবাহের ৮ টি যৌক্তিকতা- বিজ্ঞান, মানুষের হার, বাস্তবতা, পরিস্থিতি ইত্যাদির আলোকে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি নারীদের বহুবিবাহের অবৈধতার ব্যাপারে ৭ টি কারণ উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা বহুবিবাহের বিপক্ষে কথা বলেন, তাদের সমাজের বাস্তবিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লেখক।
উল্লেখ্য, লেখক বহুবিবাহের প্রতি আহ্বান জানান নি। প্রয়োজনে যে সেটির সুযোগ রয়েছে- তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন মাত্র।
.
৬. পর্দা যদি হয় নারী-পুরুষের, তবে নারীর কথাই কেন আসে?
.
প্রথমেই পুরুষ, এরপর নারীর কথা যে কুরআনে আছে- সেই আয়াত উল্লেখ করে পর্দার ক্ষেত্রে ৮ টি শর্ত উল্লেখপূর্বক আলোচনা শুরু। নারীদের মুখ ঢাকা নিয়েও সংক্ষেপে কথা রয়েছে। এরপর এসেছে, নারী পুরুষের পর্দার পার্থক্যের কারণ। এজন্য নানান দেশে ধর্ষণের একটি হিসেব তুলে ধরা হয়েছে। পর্দানশীলাকে কেউ ক্ষ্যাত বললেও তার ডিমান্ড কেমন, হিজাব পরে গরম সহ্য করার কারণ ও ফলাফল ইত্যাদি নিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন লেখক। সম্পূরক প্রশ্নোত্তরও রয়েছে বেশকিছু।
.
৭. একজন পুরুষের সাক্ষ্য সমান দু’জন নারীর সাক্ষ্য: অবমূল্যায়ন নাকি স্বস্তিদান?
.
ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু হওয়া প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে- দু’জন নারীর বক্তব্য যে, সবসময় একজন পুরুষের সমান- তা নয়। বরং কেবল একজন নারীর সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নারীদের সাক্ষ্য কখন পুরুষের অর্ধেক, তার কী যৌক্তিকতা এবং এই ব্যবস্থা যে নারীর অবমূল্যায়ন নয় বরং স্বস্তিদান-সেই বিষয়ে চমৎকারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. তালাক প্রদানের অধিকার কি কেবল স্বামীর, স্ত্রী কি দিতে পারে না?
.
তালাক প্রদান পাঁচটি পদ্ধতিতে হতে পারে যেখানে চারটি ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা থাকতে পারে এবং একটি ক্ষেত্রে স্বামী এককভাবে দিতে পারে-সেই আলোচনা করা হয়েছে। এরপর তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীর চেয়ে স্বামীকে কেন বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার ৩ টি বাস্তবসম্মত যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করেছেন লেখক।
আমার মন্তব্য:
বইটি নারী, নারীবাদী, আলিম, দায়ী ও শিক্ষিত সবার পড়া উচিত।
There are no reviews yet.